Part 24

 

[39:32]

যে ব্যক্তি আল্লাহর বিরুদ্ধে মিথ্যা বলে এবং তার কাছে সত্য আগমন করার পর তাকে মিথ্যা সাব্যস্ত করে, তার চেয়ে অধিক যালেম আর কে হবে? কাফেরদের বাসস্থান জাহান্নামে নয় কি?

[39:33]

যারা সত্য নিয়ে আগমন করছে এবং সত্যকে সত্য মেনে নিয়েছে; তারাই তো খোদাভীরু

[39:34]

তাদের জন্যে পালনকর্তার কাছে তাই রয়েছে, যা তারা চাইবেএটা সৎকর্মীদের পুরস্কার

[39:35]

যাতে আল্লাহ তাদের মন্দ কর্মসমূহ মার্জনা করেন এবং তাদের উত্তম কর্মের পুরস্কার তাদেরকে দান করেন

[39:36]

আল্লাহ কি তাঁর বান্দার পক্ষে যথেষ্ট নন? অথচ তারা আপনাকে আল্লাহর পরিবর্তে অন্যান্য উপাস্যদের ভয় দেখায় আল্লাহ যাকে গোমরাহ করেন, তার কোন পথপ্রদর্শক নেই

[39:37]

আর আল্লাহ যাকে পথপ্রদর্শন করেন, তাকে পথভ্রষ্টকারী কেউ নেইআল্লাহ কি পরাক্রমশালী, প্রতিশোধ গ্রহণকারী নন?

[39:38]

যদি আপনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন, আসমান ও যমীন কে সৃষ্টি করেছে? তারা অবশ্যই বলবে-আল্লাহবলুন, তোমরা ভেবে দেখেছ কি, যদি আল্লাহ আমার অনিষ্ট করার ইচ্ছা করেন, তবে তোমরা আল্লাহ ব্যতীত যাদেরকে ডাক, তারা কি সে অনিষ্ট দূর করতে পারবে? অথবা তিনি আমার প্রতি রহমত করার ইচ্ছা করলে তারা কি সে রহমত রোধ করতে পারবে? বলুন, আমার পক্ষে আল্লাহই যথেষ্ট নির্ভরকারীরা তাঁরই উপর নির্ভর করে

[39:39]

বলুন, হে আমার কওম, তোমরা তোমাদের জায়গায় কাজ কর, আমিও কাজ করছিসত্ত্বরই জানতে পারবে

[39:40]

কার কাছে অবমাননাকর আযাব এবং চিরস্থায়ী শাস্তি নেমে আসে

[39:41]

আমি আপনার প্রতি সত্য ধর্মসহ কিতাব নাযিল করেছি মানুষের কল্যাণকল্পেঅতঃপর যে সৎপথে আসে, সে নিজের কল্যাণের জন্যেই আসে, আর যে পথভ্রষ্ট হয়, সে নিজেরই অনিষ্টের জন্যে পথভ্রষ্ট হয়আপনি তাদের জন্যে দায়ী নন

[39:42]

আল্লাহ মানুষের প্রাণ হরণ করেন তার মৃত্যুর সময়, আর যে মরে না, তার নিদ্রাকালেঅতঃপর যার মৃত্যু অবধারিত করেন, তার প্রাণ ছাড়েন না এবং অন্যান্যদের ছেড়ে দেন এক নির্দিষ্ট সময়ের জন্যেনিশ্চয় এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে

[39:43]

তারা কি আল্লাহ ব্যতীত সুপারিশকারী গ্রহণ করেছে? বলুন, তাদের কোন এখতিয়ার না থাকলেও এবং তারা না বুঝলেও?

[39:44]

বলুন, সমস্ত সুপারিশ আল্লাহরই ক্ষমতাধীন, আসমান ও যমীনে তাঁরই সাম্রাজ্যঅতঃপর তাঁরই কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে

[39:45]

যখন খাঁটিভাবে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা হয়, তখন যারা পরকালে বিশ্বাস করে না, তাদের অন্তর সংকুচিত হয়ে যায়, আর যখন আল্লাহ ব্যতীত অন্য উপাস্যদের নাম উচ্চারণ করা হয়, তখন তারা আনন্দে উল্লসিত হয়ে উঠে

[39:46]

বলুন, হে আল্লাহ আসমান ও যমীনের স্রষ্টা, দৃশ্য ও অদৃশ্যের জ্ঞানী, আপনিই আপনার বান্দাদের মধ্যে ফয়সালা করবেন, যে বিষয়ে তারা মত বিরোধ করত

[39:47]

যদি গোনাহগারদের কাছে পৃথিবীর সবকিছু থাকে এবং তার সাথে সমপরিমাণ আরও থাকে, তবে অবশ্যই তারা কেয়ামতের দিন সে সবকিছুই নিস্কৃতি পাওয়ার জন্যে মুক্তিপন হিসেবে দিয়ে দেবেঅথচ তারা দেখতে পাবে, আল্লাহর পক্ষ থেকে এমন শাস্তি, যা তারা কল্পনাও করত না

[39:48]

আর দেখবে, তাদের দুস্কর্মসমূহ এবং যে বিষয়ে তারা ঠাট্টা-বিদ্রুপ করত, তা তাদেরকে ঘিরে নেবে

[39:49]

মানুষকে যখন দুঃখ-কষ্ট স্পর্শ করে, তখন সে আমাকে ডাকতে শুরু করে, এরপর আমি যখন তাকে আমার পক্ষ থেকে নেয়ামত দান করি, তখন সে বলে, এটা তো আমি পূর্বের জানা মতেই প্রাপ্ত হয়েছিঅথচ এটা এক পরীক্ষা, কিন্তু তাদের অধিকাংশই বোঝে না

[39:50]

তাদের পূর্ববর্তীরাও তাই বলত, অতঃপর তাদের কৃতকর্ম তাদের কোন উপকারে আসেনি

[39:51]

তাদের দুস্কর্ম তাদেরকে বিপদে ফেলেছে, এদের মধ্যেও যারা পাপী, তাদেরকেও অতি সত্ত্বর তাদের দুস্কর্ম বিপদে ফেলবেতারা তা প্রতিহত করতে সক্ষম হবে না

[39:52]

তারা কি জানেনি যে, আল্লাহ যার জন্যে ইচ্ছা রিযিক বৃদ্ধি করেন এবং পরিমিত দেননিশ্চয় এতে বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে

[39:53]

বলুন, হে আমার বান্দাগণ যারা নিজেদের উপর যুলুম করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো নানিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গোনাহ মাফ করেনতিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু

[39:54]

তোমরা তোমাদের পালনকর্তার অভিমূখী হও এবং তাঁর আজ্ঞাবহ হও তোমাদের কাছে আযাব আসার পূর্বেএরপর তোমরা সাহায্যপ্রাপ্ত হবে না;

[39:55]

তোমাদের প্রতি অবতীর্ণ উত্তম বিষয়ের অনুসরণ কর তোমাদের কাছে অতর্কিতে ও অজ্ঞাতসারে আযাব আসার পূর্বে,

[39:56]

যাতে কেউ না বলে, হায়, হায়, আল্লাহ সকাশে আমি কর্তব্যে অবহেলা করেছি এবং আমি ঠাট্টা-বিদ্রুপকারীদের অন্তর্ভূক্ত ছিলাম

[39:57]

অথবা না বলে, আল্লাহ যদি আমাকে পথপ্রদর্শন করতেন, তবে অবশ্যই আমি পরহেযগারদের একজন হতাম

[39:58]

অথবা আযাব প্রত্যক্ষ করার সময় না বলে, যদি কোনরূপে একবার ফিরে যেতে পারি, তবে আমি সৎকর্মপরায়ণ হয়ে যাব

[39:59]

হাঁ, তোমার কাছে আমার নির্দেশ এসেছিল; অতঃপর তুমি তাকে মিথ্যা বলেছিলে, অহংকার করেছিলে এবং কাফেরদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে গিয়েছিলে

[39:60]

যারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে, কেয়ামতের দিন আপনি তাদের মুখ কাল দেখবেনঅহংকারীদের আবাসস্থল জাহান্নামে নয় কি?

[39:61]

আর যারা শিরক থেকে বেঁচে থাকত, আল্লাহ তাদেরকে সাফল্যের সাথে মুক্তি দেবেন, তাদেরকে অনিষ্ট স্পর্শ করবে না এবং তারা চিন্তিতও হবে না

[39:62]

আল্লাহ সর্বকিছুর স্রষ্টা এবং তিনি সবকিছুর দায়িত্ব গ্রহণ করেন

[39:63]

আসমান ও যমীনের চাবি তাঁরই নিকটযারা আল্লাহর আয়াতসমূহকে অস্বীকার করে, তারাই ক্ষতিগ্রস্ত

[39:64]

বলুন, হে মুর্খরা, তোমরা কি আমাকে আল্লাহ ব্যতীত অন্যের এবাদত করতে আদেশ করছ?

[39:65]

আপনার প্রতি এবং আপনার পূর্ববর্তীদের পতি প্রত্যাদেশ হয়েছে, যদি আল্লাহর শরীক স্থির করেন, তবে আপনার কর্ম নিষ্ফল হবে এবং আপনি ক্ষতিগ্রস্তদের একজন হবেন

[39:66]

বরং আল্লাহরই এবাদত করুন এবং কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত থাকুন

[39:67]

তারা আল্লাহকে যথার্থরূপে বোঝেনিকেয়ামতের দিন গোটা পৃথিবী থাকবে তাঁর হাতের মুঠোতে এবং আসমান সমূহ ভাঁজ করা অবস্থায় থাকবে তাঁর ডান হাতেতিনি পবিত্রআর এরা যাকে শরীক করে, তা থেকে তিনি অনেক উর্ধ্বে

[39:68]

শিংগায় ফুঁক দেয়া হবে, ফলে আসমান ও যমীনে যারা আছে সবাই বেহুঁশ হয়ে যাবে, তবে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন অতঃপর আবার শিংগায় ফুঁক দেয়া হবে, ৎক্ষণাৎ তারা দন্ডায়মান হয়ে দেখতে থাকবে

[39:69]

পৃথিবী তার পালনকর্তার নূরে উদ্ভাসিত হবে, আমলনামা স্থাপন করা হবে, পয়গম্বরগণ ও সাক্ষীগণকে আনা হবে এবং সকলের মধ্যে ন্যায় বিচার করা হবে-তাদের প্রতি জুলুম করা হবে না

[39:70]

প্রত্যেকে যা করেছে, তার পূর্ণ প্রতিফল দেয়া হবেতারা যা কিছু করে, সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবগত

[39:71]

কাফেরদেরকে জাহান্নামের দিকে দলে দলে হাঁকিয়ে নেয়া হবেতারা যখন সেখানে পৌছাবে, তখন তার দরজাসমূহ খুলে দেয়া হবে এবং জাহান্নামের রক্ষীরা তাদেরকে বলবে, তোমাদের কাছে কি তোমাদের মধ্য থেকে পয়গম্বর আসেনি, যারা তোমাদের কাছে তোমাদের পালনকর্তার আয়াতসমূহ আবৃত্তি করত এবং সতর্ক করত এ দিনের সাক্ষাতের ব্যাপারে? তারা বলবে, হঁ্যা, কিন্তু কাফেরদের প্রতি শাস্তির হুকুমই বাস্তবায়িত হয়েছে

[39:72]

বলা হবে, তোমরা জাহান্নামের দরজা দিয়ে প্রবেশ কর, সেখানে চিরকাল অবস্থানের জন্যেকত নিকৃষ্ট অহংকারীদের আবাসস্থল

[39:73]

যারা তাদের পালনকর্তাকে ভয় করত তাদেরকে দলে দলে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাওয়া হবেযখন তারা উম্মুক্ত দরজা দিয়ে জান্নাতে পৌছাবে এবং জান্নাতের রক্ষীরা তাদেরকে বলবে, তোমাদের প্রতি সালাম, তোমরা সুখে থাক, অতঃপর সদাসর্বদা বসবাসের জন্যে তোমরা জান্নাতে প্রবেশ কর

[39:74]

তারা বলবে, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাদের প্রতি তাঁর ওয়াদা পূর্ণ করেছেন এবং আমাদেরকে এ ভূমির উত্তরাধিকারী করেছেনআমরা জান্নাতের যেখানে ইচ্ছা বসবাস করবমেহনতকারীদের পুরস্কার কতই চমৎকার

[39:75]

আপনি ফেরেশতাগণকে দেখবেন, তারা আরশের চার পাশ ঘিরে তাদের পালনকর্তার পবিত্রতা ঘোষনা করছেতাদের সবার মাঝে ন্যায় বিচার করা হবেবলা হবে, সমস্ত প্রশংসা বিশ্বপালক আল্লাহর

 

40 Ghâfir

 শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু

[40:1]

হা-মীম

[40:2]

কিতাব অবতীর্ণ হয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে, যিনি পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞ

[40:3]

পাপ ক্ষমাকারী, তওবা কবুলকারী, কঠোর শাস্তিদাতা ও সামর্থ?বানতিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেইতাঁরই দিকে হবে প্রত্যাবর্তন

[40:4]

কাফেররাই কেবল আল্লাহর আয়াত সম্পর্কে বিতর্ক করেকাজেই নগরীসমূহে তাদের বিচরণ যেন আপনাকে বিভ্রান্তিতে না ফেলে

[40:5]

তাদের পূর্বে নূহের সম্প্রদায় মিথ্যারোপ করেছিল, আর তাদের পরে অন্য অনেক দল ও প্রত্যেক সম্প্রদায় নিজ নিজ পয়গম্বরকে আক্রমণ করার ইচ্ছা করেছিল এবং তারা মিথ্যা বিতর্কে প্রবৃত্ত হয়েছিল, যেন সত্যধর্মকে ব্যর্থ করে দিতে পারেঅতঃপর আমি তাদেরকে পাকড়াও করলামকেমন ছিল আমার শাস্তি

[40:6]

এভাবে কাফেরদের বেলায় আপনার পালনকর্তার এ বাক্য সত্য হল যে, তারা জাহান্নামী

[40:7]

যারা আরশ বহন করে এবং যারা তার চারপাশে আছে, তারা তাদের পালনকর্তার সপ্রশংস পবিত্রতা বর্ণনা করে, তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে এবং মুমিনদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করে বলে, হে আমাদের পালনকর্তা, আপনার রহমত ও জ্ঞান সবকিছুতে পরিব্যাপ্তঅতএব, যারা তওবা করে এবং আপনার পথে চলে, তাদেরকে ক্ষমা করুন এবং জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করুন

[40:8]

হে আমাদের পালনকর্তা, আর তাদেরকে দাখিল করুন চিরকাল বসবাসের জান্নাতে, যার ওয়াদা আপনি তাদেরকে দিয়েছেন এবং তাদের বাপ-দাদা, পতি-পত্নী ও সন্তানদের মধ্যে যারা সৎকর্ম করে তাদেরকে নিশ্চয় আপনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়

[40:9]

এবং আপনি তাদেরকে অমঙ্গল থেকে রক্ষা করুনআপনি যাকে সেদিন অমঙ্গল থেকে রক্ষা করবেন, তার প্রতি অনুগ্রহই করবেনএটাই মহাসাফল্য

[40:10]

যারা কাফের তাদেরকে উচ্চঃস্বরে বলা হবে, তোমাদের নিজেদের প্রতি তোমাদের আজকের এ ক্ষোভ অপেক্ষা আল্লার ক্ষোভ অধিক ছিল, যখন তোমাদেরকে ঈমান আনতে বলা হয়েছিল, অতঃপর তোমরা কুফরী করছিল

[40:11]

তারা বলবে হে আমাদের পালনকর্তা! আপনি আমাদেরকে দুবার মৃত্যু দিয়েছেন এবং দুবার জীবন দিয়েছেন এখন আমাদের অপরাধ স্বীকার করছিঅতঃপর এখন ও নিস্কৃতির কোন উপায় আছে কি?

[40:12]

তোমাদের এ বিপদ এ কারণে যে, যখন এক আল্লাহকে ডাকা হত, তখন তোমরা কাফের হয়ে যেতে যখন তার সাথে শরীককে ডাকা হত তখন তোমরা বিশ্বাস স্থাপন করতেএখন আদেশ তাই, যা আল্লাহ করবেন, যিনি সর্বোচ্চ, মহান

[40:13]

তিনিই তোমাদেরকে তাঁর নিদর্শনাবলী দেখান এবং তোমাদের জন্যে আকাশ থেকে নাযিল করেন রুযীচিন্তা-ভাবনা তারাই করে, যারা আল্লাহর দিকে রুজু থাকে

[40:14]

অতএব, তোমরা আল্লাহকে খাঁটি বিশ্বাস সহকারে ডাক, যদিও কাফেররা তা অপছন্দ করে

[40:15]

তিনিই সুউচ্চ মর্যাদার অধিকারী, আরশের মালিক, তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার প্রতি ইচ্ছা তত্ত্বপূর্ণ বিষয়াদি নাযিল করেন, যাতে সে সাক্ষাতের দিন সম্পর্কে সকলকে সতর্ক করে

[40:16]

যেদিন তারা বের হয়ে পড়বে, আল্লাহর কাছে তাদের কিছুই গোপন থাকবে নাআজ রাজত্ব কার? এক প্রবল পরাক্রান্ত আল্লাহর

[40:17]

আজ প্রত্যেকেই তার কৃতকর্মের প্রতিদান পাবেআজ যুলুম নেইনিশ্চয় আল্লাহ দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী

[40:18]

আপনি তাদেরকে আসন্ন দিন সম্পর্কে সতর্ক করুন, যখন প্রাণ কন্ঠাগত হবে, দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হবে পাপিষ্ঠদের জন্যে কোন বন্ধু নেই এবং সুপারিশকারীও নেই; যার সুপারিশ গ্রাহ্য হবে

[40:19]

চোখের চুরি এবং অন্তরের গোপন বিষয় তিনি জানেন

[40:20]

আল্লাহ ফয়সালা করেন সঠিকভাবে, আল্লাহর পরিবর্তে তারা যাদেরকে ডাকে, তারা কিছুই ফয়সালা করে নানিশ্চয় আল্লাহ সবকিছু শুনেন, সবকিছু দেখেন

[40:21]

তারা কি দেশ-বিদেশ ভ্রমণ করে না, যাতে দেখত তাদের পূর্বসুরিদের কি পরিণাম হয়েছে? তাদের শক্তি ও কীর্তি পৃথিবীতে এদের অপেক্ষা অধিকতর ছিলঅতঃপর আল্লাহ তাদেরকে তাদের গোনাহের কারণে ধৃত করেছিলেন এবং আল্লাহ থেকে তাদেরকে রক্ষাকারী কেউ হয়নি

[40:22]

এর কারণ এই যে, তাদের কাছে তাদের রসূলগণ সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী নিয়ে আগমন করত, অতঃপর তারা কাফের হয়ে যায়, তখন আল্লাহ তাদের ধৃত করেননিশ্চয় তিনি শক্তিধর, কঠোর শাস্তিদাতা

[40:23]

আমি আমার নিদর্শনাবলী ও স্পষ্ট প্রমাণসহ মূসাকে প্রেরণ করেছি

[40:24]

ফেরাউন, হামান ও কারুণের কাছে, অতঃপর তারা বলল, সে তো জাদুকর, মিথ্যাবাদী

[40:25]

অতঃপর মূসা যখন আমার কাছ থেকে সত্যসহ তাদের কাছে পৌঁছাল; তখন তারা বলল, যারা তার সঙ্গী হয়ে বিশ্বাস স্থাপন করেছে, তাদের পুত্র সন্তানদেরকে হত্যা কর, আর তাদের নারীদেরকে জীবিত রাখ কাফেরদের চক্রান্ত ব্যর্থই হয়েছে

[40:26]

ফেরাউন বলল; তোমরা আমাকে ছাড়, মূসাকে হত্যা করতে দাও, ডাকুক সে তার পালনকর্তাকে! আমি আশংকা করি যে, সে তোমাদের ধর্ম পরিবর্তন করে দেবে অথবা সে দেশময় বিপর্যয় সৃষ্টি করবে

[40:27]

মূসা বলল, যারা হিসাব দিবসে বিশ্বাস করে না এমন প্রত্যেক অহংকারী থেকে আমি আমার ও তোমাদের পালনকর্তার আশ্রয় নিয়ে নিয়েছি

[40:28]

ফেরাউন গোত্রের এক মুমিন ব্যক্তি, যে তার ঈমান গোপন রাখত, সে বলল, তোমরা কি একজনকে এজন্যে হত্যা করবে যে, সে বলে, আমার পালনকর্তা আল্লাহ, অথচ সে তোমাদের পালনকর্তার নিকট থেকে স্পষ্ট প্রমাণসহ তোমাদের নিকট আগমন করেছে? যদি সে মিথ্যাবাদী হয়, তবে তার মিথ্যাবাদিতা তার উপরই চাপবে, আর যদি সে সত্যবাদী হয়, তবে সে যে শাস্তির কথা বলছে, তার কিছু না কিছু তোমাদের উপর পড়বেইনিশ্চয় আল্লাহ সীমালংঘনকারী, মিথ্যাবাদীকে পথ প্রদর্শন করেন না

[40:29]

হে আমার কওম, আজ এদেশে তোমাদেরই রাজত্ব, দেশময় তোমরাই বিচরণ করছ; কিন্তু আমাদের আল্লাহর শাস্তি এসে গেলে কে আমাদেরকে সাহায্য করবে? ফেরাউন বলল, আমি যা বুঝি, তোমাদেরকে তাই বোঝাই, আর আমি তোমাদেরকে মঙ্গলের পথই দেখাই

[40:30]

সে মুমিন ব্যক্তি বললঃ হে আমার কওম, আমি তোমাদের জন্যে পূর্ববর্তী সম্প্রদায়সমূহের মতই বিপদসঙ্কুল দিনের আশংকা করি

[40:31]

যেমন, কওমে নূহ, আদ, সামুদ ও তাদের পরবর্তীদের অবস্থা হয়েছিলআল্লাহ বান্দাদের প্রতি কোন যুলুম করার ইচ্ছা করেন না

[40:32]

হে আমার কওম, আমি তোমাদের জন্যে প্রচন্ড হাঁক-ডাকের দিনের আশংকা করি

[40:33]

যেদিন তোমরা পেছনে ফিরে পলায়ন করবে; কিন্তু আল্লাহ থেকে তোমাদেরকে রক্ষাকারী কেউ থাকবে নাআল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তার কোন পথপ্রদর্শক নেই

[40:34]

ইতিপূর্বে তোমাদের কাছে ইউসুফ সুস্পষ্ট প্রামাণাদিসহ আগমন করেছিল, অতঃপর তোমরা তার আনীত বিষয়ে সন্দেহই পোষণ করতেঅবশেষে যখন সে মারা গেল, তখন তোমরা বলতে শুরু করলে, আল্লাহ ইউসুফের পরে আর কাউকে রসূলরূপে পাঠাবেন নাএমনিভাবে আল্লাহ সীমালংঘনকারী, সংশয়ী ব্যক্তিকে পথভ্রষ্ট করেন

[40:35]

যারা নিজেদের কাছে আগত কোন দলীল ছাড়াই আল্লাহর আয়াত সম্পর্কে বিতর্ক করে, তাদের একজন আল্লাহ ও মুমিনদের কাছে খুবই অসন্তোষজনকএমনিভাবে আল্লাহ প্রত্যেক অহংকারী-স্বৈরাচারী ব্যক্তির অন্তরে মোহর এঁটে দেন

[40:36]

ফেরাউন বলল, হে হামান, তুমি আমার জন্যে একটি সুউচ্চ প্রাসাদ নির্মাণ কর, হয়তো আমি পৌঁছে যেতে পারব

[40:37]

আকাশের পথে, অতঃপর উঁকি মেরে দেখব মূসার আল্লাহকেবস্তুতঃ আমি তো তাকে মিথ্যাবাদীই মনে করিএভাবেই ফেরাউনের কাছে সুশোভিত করা হয়েছিল তার মন্দ কর্মকে এবং সোজা পথ থেকে তাকে বিরত রাখা হয়েছিলফেরাউনের চক্রান্ত ব্যর্থ হওয়ারই ছিল

[40:38]

মুমিন লোকটি বললঃ হে আমার কওম, তোমরা আমার অনুসরণ করআমি তোমাদেরকে সৎপথ প্রদর্শন করব

[40:39]

হে আমার কওম, পার্থিব এ জীবন তো কেবল উপভোগের বস্তু, আর পরকাল হচ্ছে স্থায়ী বসবাসের গৃহ

[40:40]

যে মন্দ কর্ম করে, সে কেবল তার অনুরূপ প্রতিফল পাবে, আর যে, পুরুষ অথবা নারী মুমিন অবস্থায় সৎকর্ম করে তারাই জান্নাতে প্রবেশ করবেতথায় তাদেরকে বে-হিসাব রিযিক দেয়া হবে

[40:41]

হে আমার কওম, ব্যাপার কি, আমি তোমাদেরকে দাওয়াত দেই মুক্তির দিকে, আর তোমরা আমাকে দাওয়াত দাও জাহান্নামের দিকে

[40:42]

তোমরা আমাকে দাওয়াত দাও, যাতে আমি আল্লাহকে অস্বীকার করি এবং তাঁর সাথে শরীক করি এমন বস্তুকে, যার কোন প্রমাণ আমার কাছে নেইআমি তোমাদেরকে দাওয়াত দেই পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল আল্লাহর দিকে

[40:43]

এতে সন্দেহ নেই যে, তোমরা আমাকে যার দিকে দাওয়াত দাও, হইকালে ও পরকালে তার কোন দাওয়াত নেই! আমাদের প্রত্যাবর্তন আল্লাহর দিকে এবং সীমা লংঘকারীরাই জাহান্নামী

[40:44]

আমি তোমাদেরকে যা বলছি, তোমরা একদিন তা স্মরণ করবেআমি আমার ব্যাপার আল্লাহর কাছে সমর্পণ করছিনিশ্চয় বান্দারা আল্লাহর দৃষ্টিতে রয়েছে

[40:45]

অতঃপর আল্লাহ তাকে তাদের চক্রান্তের অনিষ্ট থেকে রক্ষা করলেন এবং ফেরাউন গোত্রকে শোচনীয় আযাব গ্রাস করল

[40:46]

সকালে ও সন্ধ্যায় তাদেরকে আগুনের সামনে পেশ করা হয় এবং যেদিন কেয়ামত সংঘটিত হবে, সেদিন আদেশ করা হবে, ফেরাউন গোত্রকে কঠিনতর আযাবে দাখিল কর

[40:47]

যখন তারা জাহান্নামে পরস্পর বিতর্ক করবে, অতঃপর দূর্বলরা অহংকারীদেরকে বলবে, আমরা তোমাদের অনুসারী ছিলাম তোমরা এখন জাহান্নামের আগুনের কিছু অংশ আমাদের থেকে নিবৃত করবে কি?

[40:48]

অহংকারীরা বলবে, আমরা সবাই তো জাহান্নামে আছিআল্লাহ তাঁর বান্দাদের ফয়সালা করে দিয়েছেন

[40:49]

যারা জাহান্নামে আছে, তারা জাহান্নামের রক্ষীদেরকে বলবে, তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে বল, তিনি যেন আমাদের থেকে একদিনের আযাব লাঘব করে দেন

[40:50]

রক্ষীরা বলবে, তোমাদের কাছে কি সুস্পষ্ট প্রমাণাদিসহ তোমাদের রসূল আসেননি? তারা বলবে হঁ্যারক্ষীরা বলবে, তবে তোমরাই দোয়া করবস্তুতঃ কাফেরদের দোয়া নিস্ফলই হয়

[40:51]

আমি সাহায্য করব রসূলগণকে ও মুমিনগণকে পার্থিব জীবনে ও সাক্ষীদের দন্ডায়মান হওয়ার দিবসে

[40:52]

সে দিন যালেমদের ওযর-আপত্তি কোন উপকারে আসবে না, তাদের জন্যে থাকবে অভিশাপ এবং তাদের জন্যে থাকবে মন্দ গৃহ

[40:53]

নিশ্চয় আমি মূসাকে হেদায়েত দান করেছিলাম এবং বনী ইসরাঈলকে কিতাবের উত্তরাধিকারী করেছিলাম

[40:54]

বুদ্ধিমানদের জন্যে উপদেশ ও হেদায়েত স্বরূপ

[40:55]

অতএব, আপনি সবর করুন নিশ্চয় আল্লাহর ওয়াদা সত্যআপনি আপনার গোনাহের জন্যে ক্ষমা প্রর্থনা করুন এবং সকাল-সন্ধ্যায় আপনার পালনকর্তার প্রশংসাসহ পবিত্রতা বর্ণনা করুন

[40:56]

নিশ্চয় যারা আল্লাহর আয়াত সম্পর্কে বিতর্ক করে তাদের কাছে আগত কোন দলীল ব্যতিরেকে, তাদের অন্তরে আছে কেবল আত্নম্ভরিতা, যা অর্জনে তারা সফল হবে নাঅতএব, আপনি আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করুননিশ্চয় তিনি সবকিছু শুনেন, সবকিছু দেখেন

[40:57]

মানুষের সৃষ্টি অপেক্ষা নভোমন্ডল ও ভূ-মন্ডলের সৃষ্টি কঠিনতরকিন্তু অধিকাংশ মানুষ বোঝে না

[40:58]

অন্ধ ও চক্ষুষ্মান সমান নয়, আর যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে এবং কুকর্মীতোমরা অল্পই অনুধাবন করে থাক

[40:59]

কেয়ামত অবশ্যই আসবে, এতে সন্দেহ নেই; কিন্ত অধিকাংশ লোক বিশ্বাস স্থাপন করে না

[40:60]

তোমাদের পালনকর্তা বলেন, তোমরা আমাকে ডাক, আমি সাড়া দেবযারা আমার এবাদতে অহংকার করে তারা সত্বরই জাহান্নামে দাখিল হবে লাঞ্ছিত হয়ে

[40:61]

তিনিই আল্লাহ যিনি রাত্র সৃষ্টি করেছেন তোমাদের বিশ্রামের জন্যে এবং দিবসকে করেছেন দেখার জন্যেনিশ্চয় আল্লাহ মানুষের প্রতি অনুগ্রহশীল, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে না

[40:62]

তিনি আল্লাহ, তোমাদের পালনকর্তা, সব কিছুর স্রষ্টাতিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেইঅতএব তোমরা কোথায় বিভ্রান্ত হচ্ছ?

[40:63]

এমনিভাবে তাদেরকে বিভ্রান্ত করা হয়, যারা আল্লাহর আয়াতসমূহকে অস্বীকার করে

[40:64]

আল্লাহ, পৃথিবীকে করেছেন তোমাদের জন্যে বাসস্থান, আকাশকে করেছেন ছাদ এবং তিনি তোমাদেরকে আকৃতি দান করেছেন, অতঃপর তোমাদের আকৃতি সুন্দর করেছেন এবং তিনি তোমাদেরকে দান করেছেন পরিচ্ছন্ন রিযিকতিনি আল্লাহ, তোমাদের পালনকর্তাবিশ্বজগতের পালনকর্তা, আল্লাহ বরকতময়

[40:65]

তিনি চিরঞ্জীব, তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেইঅতএব, তাঁকে ডাক তাঁর খাঁটি এবাদতের মাধ্যমেসমস্ত প্রশংসা বিশ্বজগতের পালনকর্তা আল্লাহর

[40:66]

বলুন, যখন আমার কাছে আমার পালনকর্তার পক্ষ থেকে স্পষ্ট প্রমাণাদি এসে গেছে, তখন আল্লাহ ব্যতীত তোমরা যার পূজা কর, তার এবাদত করতে আমাকে নিষেধ করা হয়েছেআমাকে আদেশ করা হয়েছে বিশ্ব পালনকর্তার অনুগত থাকতে

[40:67]

তিনি তো তোমাদের সৃষ্টি করেছেন মাটির দ্বারা, অতঃপর শুক্রবিন্দু দ্বারা, অতঃপর জমাট রক্ত দ্বারা, অতঃপর তোমাদেরকে বের করেন শিশুরূপে, অতঃপর তোমরা যৌবনে পদর্পণ কর, অতঃপর বার্ধক্যে উপনীত হওতোমাদের কারও কারও এর পূর্বেই মৃত্যু ঘটে এবং তোমরা নির্ধারিত কালে পৌঁছ এবং তোমরা যাতে অনুধাবন কর

[40:68]

তিনিই জীবিত করেন এবং মৃত্যু দেনযখন তিনি কোন কাজের আদেশ করেন, তখন একথাই বলেন, হয়ে যা’-তা হয়ে যায়

[40:69]

আপনি কি তাদেরকে দেখেননি, যারা আল্লাহর আয়াত সম্পর্কে বিতর্ক করে, তারা কোথায় ফিরছে?

[40:70]

যারা কিতাবের প্রতি এবং যে বিষয় দিয়ে আমি পয়গম্বরগণকে প্রেরণ করেছি, সে বিষয়ের প্রতি মিথ্যারোপ করে অতএব, সত্বরই তারা জানতে পারবে

[40:71]

যখন বেড়িও শৃঙ্খল তাদের গলদেশে পড়বেতাদেরকে টেনে নিয়ে যাওয়া হবে

[40:72]

ফুটন্ত পানিতে, অতঃপর তাদেরকে আগুনে জ্বালানো হবে

[40:73]

অতঃপর তাদেরকে বলা হবে, কোথায় গেল যাদেরকে তোমরা শরীক করতে

[40:74]

আল্লাহ ব্যতীত? তারা বলবে, তারা আমাদের কাছ থেকে উধাও হয়ে গেছে; বরং আমরা তো ইতিপূর্বে কোন কিছুর পূজাই করতাম নাএমনি ভাবে আল্লাহ কাফেরদেরকে বিভ্রান্ত করেন

[40:75]

এটা একারণে যে, তোমরা দুনিয়াতে অন্যায়ভাবে আনন্দ-উল্লাস করতে এবং এ কারণে যে, তোমরা ঔদ্ধত্য করতে

[40:76]

প্রবেশ কর তোমরা জাহান্নামের দরজা দিয়ে সেখানে চিরকাল বসবাসের জন্যেকত নিকৃষ্ট দাম্ভিকদের আবাসস্থল

[40:77]

অতএব আপনি সবর করুননিশ্চয় আল্লাহর ওয়াদা সত্যঅতঃপর আমি কাফেরদেরকে যে শাস্তির ওয়াদা দেই, তার কিয়দংশ যদি আপনাকে দেখিয়ে দেই অথবা আপনার প্রাণ হরণ করে নেই, সর্বাবস্থায় তারা তো আমারই কাছে ফিরে আসবে

[40:78]

আমি আপনার পূর্বে অনেক রসূল প্রেরণ করেছি, তাদের কারও কারও ঘটনা আপনার কাছে বিবৃত করেছি এবং কারও কারও ঘটনা আপনার কাছে বিবৃত করিনিআল্লাহর অনুমতি ব্যতীত কোন নিদর্শন নিয়ে আসা কোন রসূলের কাজ নয়যখন আল্লাহর আদেশ আসবে, তখন ন্যায় সঙ্গত ফয়সালা হয়ে যাবে সেক্ষেত্রে মিথ্যাপন্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে

[40:79]

আল্লাহ তোমাদের জন্যে চতুস্পদ জন্তু সৃষ্টি করেছেন, যাতে কোন কোনটিই বাহন হিসাবে ব্যবহার কর এবং কোন কোনটিকে ভক্ষণ কর

[40:80]

তাতে তোমাদের জন্যে অনেক উপকারিতা রয়েছে আর এজন্যে সৃষ্টি করেছেন; যাতে সেগুলোতে আরোহণ করে তোমরা তোমাদের অভীষ্ট প্রয়োজন পূর্ণ করতে পারএগুলোর উপর এবং নৌকার উপর তোমরা বাহিত হও

[40:81]

তিনি তোমাদেরকে তাঁর নিদর্শনাবলী দেখানঅতএব, তোমরা আল্লাহর কোন কোন নিদর্শনকে অস্বীকার করবে?

[40:82]

তারা কি পৃথিবীতে ভ্রমণ করেনি? করলে দেখত, তাদের পূর্ববর্তীদের কি পরিণাম হয়েছেতারা তাদের চেয়ে সংখ্যায় বেশী এবং শক্তি ও কীর্তিতে অধিক প্রবল ছিল, অতঃপর তাদের কর্ম তাদেরকে কোন উপকার দেয়নি

[40:83]

তাদের কাছে যখন তাদের রসূলগণ স্পষ্ট প্রমাণাদিসহ আগমন করেছিল, তখন তারা নিজেদের জ্ঞান-গরিমার দম্ভ প্রকাশ করেছিলতারা যে বিষয় নিয়ে ঠাট্টাবিদ্রুপ করেছিল, তাই তাদেরকে গ্রাস করে নিয়েছিল

[40:84]

তারা যখন আমার শাস্তি প্রত্যক্ষ করল, তখন বলল, আমরা এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস করলাম এবং যাদেরকে শরীক করতাম, তাদেরকে পরিহার করলাম

[40:85]

অতঃপর তাদের এ ঈমান তাদের কোন উপকারে আসল না যখন তারা শাস্তি প্রত্যক্ষ করলআল্লাহর এ নিয়মই পূর্ব থেকে তাঁর বান্দাদের মধ্যে প্রচলিত হয়েছেসেক্ষেত্রে কাফেররা ক্ষতিগ্রস্ত হয়

 

41 Fussilat

 শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু

[41:1]

হা-মীম

[41:2]

এটা অবতীর্ণ পরম করুণাময়, দয়ালুর পক্ষ থেকে

[41:3]

এটা কিতাব, এর আয়াতসমূহ বিশদভাবে বিবৃত আরবী কোরআনরূপে জ্ঞানী লোকদের জন্য

[41:4]

সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে, অতঃপর তাদের অধিকাংশই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, তারা শুনে না

[41:5]

তারা বলে আপনি যে বিষয়ের দিকে আমাদের কে দাওয়াত দেন, সে বিষয়ে আমাদের অন্তর আবরণে আবৃত, আমাদের কর্ণে আছে বোঝা এবং আমাদের ও আপনার মাঝখানে আছে অন্তরালঅতএব, আপনি আপনার কাজ করুন এবং আমরা আমাদের কাজ করি

[41:6]

বলুন, আমিও তোমাদের মতই মানুষ, আমার প্রতি ওহী আসে যে, তোমাদের মাবুদ একমাত্র মাবুদ, অতএব তাঁর দিকেই সোজা হয়ে থাক এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করআর মুশরিকদের জন্যে রয়েছে দুর্ভোগ,

[41:7]

যারা যাকাত দেয় না এবং পরকালকে অস্বীকার করে

[41:8]

নিশ্চয় যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে, তাদের জন্যে রয়েছে অফুরন্ত পুরস্কার

[41:9]

বলুন, তোমরা কি সে সত্তাকে অস্বীকার কর যিনি পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন দুদিনে এবং তোমরা কি তাঁর সমকক্ষ স্থীর কর? তিনি তো সমগ্র বিশ্বের পালনকর্তা

[41:10]

তিনি পৃথিবীতে উপরিভাগে অটল পর্বতমালা স্থাপন করেছেন, তাতে কল্যাণ নিহিত রেখেছেন এবং চার দিনের মধ্যে তাতে তার খাদ্যের ব্যবস্থা করেছেন-পূর্ণ হল জিজ্ঞাসুদের জন্যে

[41:11]

অতঃপর তিনি আকাশের দিকে মনোযোগ দিলেন যা ছিল ধুম্রকুঞ্জ, অতঃপর তিনি তাকে ও পৃথিবীকে বললেন, তোমরা উভয়ে আস ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায়তারা বলল, আমরা স্বেচ্ছায় আসলাম

[41:12]

অতঃপর তিনি আকাশমন্ডলীকে দুদিনে সপ্ত আকাশ করে দিলেন এবং প্রত্যেক আকাশে তার আদেশ প্রেরণ করলেনআমি নিকটবর্তী আকাশকে প্রদীপমালা দ্বারা সুশোভিত ও সংরক্ষিত করেছিএটা পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞ আল্লাহর ব্যবস্থাপনা

[41:13]

অতঃপর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে বলুন, আমি তোমাদেরকে সতর্ক করলাম এক কঠোর আযাব সম্পর্কে আদ ও সামুদের আযাবের মত

[41:14]

যখন তাদের কাছে রসূলগণ এসেছিলেন সম্মুখ দিক থেকে এবং পিছন দিক থেকে এ কথা বলতে যে, তোমরা আল্লাহ ব্যতীত কারও পূজা করো নাতারা বলেছিল, আমাদের পালনকর্তা ইচ্ছা করলে অবশ্যই ফেরেশতা প্রেরণ করতেন, অতএব, আমরা তোমাদের আনীত বিষয় অমান্য করলাম

[41:15]

যারা ছিল আদ, তারা পৃথিবীতে অযথা অহংকার করল এবং বলল, আমাদের অপেক্ষা অধিক শক্তিধর কে? তারা কি লক্ষ্য করেনি যে, যে আল্লাহ তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, তিনি তাদের অপেক্ষা অধিক শক্তিধর ? বস্তুতঃ তারা আমার নিদর্শনাবলী অস্বীকার করত

[41:16]

অতঃপর আমি তাদেরকে পার্থিব জীবনে লাঞ্ছনার আযাব আস্বাদন করানোর জন্যে তাদের উপর প্রেরণ করলাম ঝঞ্ঝাবায়ু বেশ কতিপয় অশুভ দিনেআর পরকালের আযাব তো আরও লাঞ্ছনাকর এমতাবস্থায় যে, তারা সাহায্যপ্রাপ্ত হবে না

[41:17]

আর যারা সামূদ, আমি তাদেরকে প্রদর্শন করেছিলাম, অতঃপর তারা সৎপথের পরিবর্তে অন্ধ থাকাই পছন্দ করলঅতঃপর তাদের কৃতকর্মের কারণে তাদেরকে অবমাননাকর আযাবের বিপদ এসে ধৃত করল

[41:18]

যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছিল ও সাবধানে চলত, আমি তাদেরকে উদ্ধার করলাম

[41:19]

যেদিন আল্লাহর শত্রুদেরকে অগ্নিকুন্ডের দিকে ঠেলে নেওয়া হবেএবং ওদের বিন্যস্ত করা হবে বিভিন্ন দলে

[41:20]

তারা যখন জাহান্নামের কাছে পৌঁছাবে, তখন তাদের কান, চক্ষু ও ত্বক তাদের কর্ম সম্পর্কে সাক্ষ্য দেবে

[41:21]

তারা তাদের ত্বককে বলবে, তোমরা আমাদের বিপক্ষে সাক্ষ্য দিলে কেন? তারা বলবে, যে আল্লাহ সব কিছুকে বাকশক্তি দিয়েছেন, তিনি আমাদেরকেও বাকশক্তি দিয়েছেনতিনিই তোমাদেরকে প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন এবং তোমরা তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তিত হবে

[41:22]

তোমাদের কান, তোমাদের চক্ষু এবং তোমাদের ত্বক তোমাদের বিপক্ষে সাক্ষ্য দেবে না ধারণার বশবর্তী হয়ে তোমরা তাদের কাছে কিছু গোপন করতে নাতবে তোমাদের ধারণা ছিল যে, তোমরা যা কর তার অনেক কিছুই আল্লাহ জানেন না

[41:23]

তোমাদের পালনকর্তা সম্বন্ধে তোমাদের এ ধারণাই তোমাদেরকে ধ্বংস করেছেফলে তোমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছ

[41:24]

অতঃপর যদি তারা সবর করে, তবুও জাহান্নামই তাদের আবাসস্থলআর যদি তারা ওযরখাহী করে, তবে তাদের ওযর কবুল করা হবে না

[41:25]

আমি তাদের পেছনে সঙ্গী লাগিয়ে দিয়েছিলাম, অতঃপর সঙ্গীরা তাদের অগ্র-পশ্চাতের আমল তাদের দৃষ্টিতে শোভনীয় করে দিয়েছিলতাদের ব্যাপারেও শাস্তির আদেশ বাস্তবায়িত হল, যা বাস্তবায়িত হয়েছিল তাদের পূর্ববতী জিন ও মানুষের ব্যাপারেনিশ্চয় তারা ক্ষতিগ্রস্ত

[41:26]

আর কাফেররা বলে, তোমরা এ কোরআন শ্রবণ করো না এবং এর আবৃত্তিতে হঞ্জগোল সৃষ্টি কর, যাতে তোমরা জয়ী হও

[41:27]

আমি অবশ্যই কাফেরদেরকে কঠিন আযাব আস্বাদন করাব এবং আমি অবশ্যই তাদেরকে তাদের মন্দ ও হীন কাজের প্রতিফল দেব

[41:28]

এটা আল্লাহর শত্রুদের শাস্তি-জাহান্নামতাতে তাদের জন্যে রয়েছে স্থায়ী আবাস, আমার আয়াতসমূহ অস্বীকার করার প্রতিফলস্বরূপ

[41:29]

কাফেররা বলবে, হে আমাদের পালনকর্তা! যেসব জিন ও মানুষ আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিল, তাদেরকে দেখিয়ে দাও, আমরা তাদেরকে পদদলিত করব, যাতে তারা যথেষ্ট অপমানিত হয়

[41:30]

নিশ্চয় যারা বলে, আমাদের পালনকর্তা আল্লাহ, অতঃপর তাতেই অবিচল থাকে, তাদের কাছে ফেরেশতা অবতীর্ণ হয় এবং বলে, তোমরা ভয় করো না, চিন্তা করো না এবং তোমাদের প্রতিশ্রুত জান্নাতের সুসংবাদ শোন

[41:31]

ইহকালে ও পরকালে আমরা তোমাদের বন্ধুসেখানে তোমাদের জন্য আছে যা তোমাদের মন চায় এবং সেখানে তোমাদের জন্যে আছে তোমরা দাবী কর

[41:32]

এটা ক্ষমাশীল করুনাময়ের পক্ষ থেকে সাদর আপ্যায়ন

[41:33]

যে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়, ৎকর্ম করে এবং বলে, আমি একজন আজ্ঞাবহ, তার কথা অপেক্ষা উত্তম কথা আর কার?

[41:34]

সমান নয় ভাল ও মন্দজওয়াবে তাই বলুন যা উৎকৃষ্টতখন দেখবেন আপনার সাথে যে ব্যক্তির শুত্রুতা রয়েছে, সে যেন অন্তরঙ্গ বন্ধু

[41:35]

এ চরিত্র তারাই লাভ করে, যারা সবর করে এবং এ চরিত্রের অধিকারী তারাই হয়, যারা অত্যন্ত ভাগ্যবান

[41:36]

যদি শয়তানের পক্ষ থেকে আপনি কিছু কুমন্ত্রণা অনুভব করেন, তবে আল্লাহর শরণাপন্ন হোননিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ

[41:37]

তাঁর নিদর্শনসমূহের মধ্যে রয়েছে দিবস, রজনী, সূর্য ও চন্দ্রতোমরা সূর্যকে সেজদা করো না, চন্দ্রকেও না; আল্লাহকে সেজদা কর, যিনি এগুলো সৃষ্টি করেছেন, যদি তোমরা নিষ্ঠার সাথে শুধুমাত্র তাঁরই এবাদত কর

[41:38]

অতঃপর তারা যদি অহংকার করে, তবে যারা আপনার পালনকর্তার কাছে আছে, তারা দিবারাত্রি তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করে এবং তারা ক্লান্ত হয় না[ Sajdah ]

[41:39]

তাঁর এক নিদর্শন এই যে, তুমি ভূমিকে দেখবে অনুর্বর পড়ে আছেঅতঃপর আমি যখন তার উপর বৃষ্টি বর্ষণ করি, তখন সে শস্যশ্যামল ও স্ফীত হয়নিশ্চয় যিনি একে জীবিত করেন, তিনি জীবিত করবেন মৃতদেরকেওনিশ্চয় তিনি সবকিছু করতে সক্ষম

[41:40]

নিশ্চয় যারা আমার আয়াতসমূহের ব্যাপারে বক্রতা অবলম্বন করে, তারা আমার কাছে গোপন নয়যে ব্যক্তি জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে সে শ্রেষ্ঠ, না যে কেয়ামতের দিন নিরাপদে আসবে? তোমরা যা ইচ্ছা কর, নিশ্চয় তিনি দেখেন যা তোমরা কর

[41:41]

নিশ্চয় যারা কোরআন আসার পর তা অস্বীকার করে, তাদের মধ্যে চিন্তা-ভাবনার অভাব রয়েছেএটা অবশ্যই এক সম্মানিত গ্রন্থ

[41:42]

এতে মিথ্যার প্রভাব নেই, সামনের দিক থেকেও নেই এবং পেছন দিক থেকেও নেইএটা প্রজ্ঞাময়, প্রশংসিত আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ

[41:43]

আপনাকে তো তাই বলা হয়, যা বলা হত পূর্ববর্তী রসূলগনকেনিশ্চয় আপনার পালনকর্তার কাছে রয়েছে ক্ষমা এবং রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি

[41:44]

আমি যদি একে অনারব ভাষায় কোরআন করতাম, তবে অবশ্যই তারা বলত, এর আয়াতসমূহ পরিস্কার ভাষায় বিবৃত হয়নি কেন? কি আশ্চর্য যে, কিতাব অনারব ভাষায় আর রসূল আরবী ভাষী! বলুন, এটা বিশ্বাসীদের জন্য হেদায়েত ও রোগের প্রতিকারযারা মুমিন নয়, তাদের কানে আছে ছিপি, আর কোরআন তাদের জন্যে অন্ধত্বতাদেরকে যেন দূরবর্তী স্থান থেকে আহবান করা হয়

[41:45]

আমি মূসাকে কিতাব দিয়েছিলাম, অতঃপর তাতে মতভেদ সৃষ্টি হয়আপনার পালনকর্তার পক্ষ থেকে পূর্ব সিদ্ধান্ত না থাকলে তাদের মধ্যে ফয়সালা হয়ে যেততারা কোরআন সমন্ধে এক অস্বস্তিকর সন্দেহে লিপ্ত

[41:46]

যে সৎকর্ম করে, সে নিজের উপকারের জন্যেই করে, আর যে অসৎকর্ম করে, তা তার উপরই বর্তাবেআপনার পালনকর্তা বান্দাদের প্রতি মোটেই যুলুম করেন না