Part 21

 

[29:46]

তোমরা কিতাবধারীদের সাথে তর্ক-বিতর্ক করবে না, কিন্তু উত্তম পন্থায়; তবে তাদের সাথে নয়, যারা তাদের মধ্যে বে-ইনসাফএবং বল, আমাদের প্রতি ও তোমাদের প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে, তাতে আমরা বিশ্বাস স্থাপন করেছিআমাদের উপাস্য ও তোমাদের উপাস্য একই এবং আমরা তাঁরই আজ্ঞাবহ

[29:47]

এভাবেই আমি আপনার প্রতি কিতাব অবর্তীণ করেছিঅতঃপর যাদের কে আমি কিতাব দিয়েছিলাম, তারা একে মেনে চলে এবং এদেরও (মক্কাবাসীদেরও) কেউ কেউ এতে বিশ্বাস রাখেকেবল কাফেররাই আমার আয়াতসমূহ অস্বীকার করে

[29:48]

আপনি তো এর পূর্বে কোন কিতাব পাঠ করেননি এবং স্বীয় দক্ষিণ হস্ত দ্বারা কোন কিতাব লিখেননিএরূপ হলে মিথ্যাবাদীরা অবশ্যই সন্দেহ পোষণ করত

[29:49]

বরং যাদেরকে জ্ঞান দেয়া হয়েছে, তাদের অন্তরে ইহা (কোরআন) তো স্পষ্ট আয়াতকেবল বে-ইনসাফরাই আমার আয়াতসমূহ অস্বীকার করে

[29:50]

তারা বলে, তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে তার প্রতি কিছু নিদর্শন অবতীর্ণ হল না কেন? বলুন, নিদর্শন তো আল্লাহর ইচ্ছাধীনআমি তো একজন সুস্পষ্ট সতর্ককারী মাত্র

[29:51]

এটাকি তাদের জন্যে যথেষ্ট নয় যে, আমি আপনার প্রতি কিতাব নাযিল করেছি, যা তাদের কাছে পাঠ করা হয়এতে অবশ্যই বিশ্বাসী লোকদের জন্যে রহমত ও উপদেশ আছে

[29:52]

বলুন, আমার মধ্যে ও তোমাদের মধ্যে আল্লাহই সাক্ষীরূপে যথেষ্টতিনি জানেন যা কিছু নভোমন্ডলে ও ভূ-মন্ডলে আছেআর যারা মিথ্যায় বিশ্বাস করে ও আল্লাহকে অস্বীকার করে, তারাই ক্ষতিগ্রস্ত

[29:53]

তারা আপনাকে আযাব ত্বরান্বিত করতে বলেযদি আযাবের সময় নির্ধারিত না থাকত, তবে আযাব তাদের উপর এসে যেত নিশ্চয়ই আকস্মিকভাবে তাদের কাছে আযাব এসে যাবে, তাদের খবরও থাকবে না

[29:54]

তারা আপনাকে আযাব ত্বরান্বিত করতে বলে; অথচ জাহান্নাম কাফেরদেরকে ঘেরাও করছে

[29:55]

যেদিন আযাব তাদেরকে ঘেরাও করবে মাথার উপর থেকে এবং পায়ের নীচ থেকেআল্লাহ বললেন, তোমরা যা করতে, তার স্বাদ গ্রহণ কর

[29:56]

হে আমার ঈমানদার বান্দাগণ, আমার পৃথিবী প্রশস্তঅতএব তোমরা আমারই এবাদত কর

[29:57]

জীবমাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবেঅতঃপর তোমরা আমারই কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে

[29:58]

যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও ৎকর্ম করে, আমি অবশ্যই তাদেরকে জান্নাতের সুউচ্চ প্রাসাদে স্থান দেব, যার তলদেশে প্রস্রবণসমূহ প্রবাহিতসেখানে তারা চিরকাল থাকবেকত উত্তম পুরস্কার কর্মীদের

[29:59]

যারা সবর করে এবং তাদের পালনকর্তার উপর ভরসা করে

[29:60]

এমন অনেক জন্তু আছে, যারা তাদের খাদ্য সঞ্চিত রাখে নাআল্লাহই রিযিক দেন তাদেরকে এবং তোমাদেরকেওতিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ

[29:61]

যদি আপনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন, কে নভোমন্ডল ও ভূ-মন্ডল সৃষ্টি করেছে, চন্দ্র ও সূর্যকে কর্মে নিয়োজিত করেছে? তবে তারা অবশ্যই বলবে আল্লাহতাহলে তারা কোথায় ঘুরে বেড়াচ্ছে?

[29:62]

আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার জন্য ইচ্ছা রিযিক প্রশস্ত করে দেন এবং যার জন্য ইচ্ছা হ্রাস করেননিশ্চয়, আল্লাহ সর্ববিষয়ে সম্যক পরিজ্ঞাত

[29:63]

যদি আপনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন, কে আকাশ থেকে বারি বর্ষণ করে, অতঃপর তা দ্বারা মৃত্তিকাকে উহার মৃত হওয়ার পর সঞ্জীবিত করে? তবে তারা অবশ্যই বলবে, আল্লাহবলুন, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই কিন্তু তাদের অধিকাংশই তা বোঝে না

[29:64]

এই পার্থিব জীবন ক্রীড়া-কৌতুক বৈ তো কিছুই নয়পরকালের গৃহই প্রকৃত জীবন; যদি তারা জানত

[29:65]

তারা যখন জলযানে আরোহণ করে তখন একনিষ্ঠভাবে আল্লাহকে ডাকেঅতঃপর তিনি যখন স্থলে এনে তাদেরকে উদ্ধার করেন, তখনই তারা শরীক করতে থাকে

[29:66]

যাতে তারা তাদের প্রতি আমার দান অস্বীকার করে এবং ভোগ-বিলাসে ডুবে থাকেসত্বরই তারা জানতে পারবে

[29:67]

তারা কি দেখে না যে, আমি একটি নিরাপদ আশ্রয়স্থল করেছিঅথচ এর চতুপার্শ্বে যারা আছে, তাদের উপর আক্রমণ করা হয়তবে কি তারা মিথ্যায়ই বিশ্বাস করবে এবং আল্লাহর নেয়ামত অস্বীকার করবে?

[29:68]

যে আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা কথা গড়ে অথবা তার কাছে সত্য আসার পর তাকে অস্বীকার করে, তার কি স্মরণ রাখা উচিত নয় যে, জাহান্নামই সেসব কাফেরের আশ্রয়স্থল হবে?

[29:69]

যারা আমার পথে সাধনায় আত্মনিয়োগ করে, আমি অবশ্যই তাদেরকে আমার পথে পরিচালিত করবনিশ্চয় আল্লাহ ৎকর্মপরায়ণদের সাথে আছেন

 

30 Ar-Rûm

 শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু

[30:1]

আলিফ-লাম-মীম,

[30:2]

রোমকরা পরাজিত হয়েছে,

[30:3]

নিকটবর্তী এলাকায় এবং তারা তাদের পরাজয়ের পর অতিসত্বর বিজয়ী হবে,

[30:4]

কয়েক বছরের মধ্যে অগ্র-পশ্চাতের কাজ আল্লাহর হাতেইসেদিন মুমিনগণ আনন্দিত হবে

[30:5]

আল্লাহর সাহায্যেতিনি যাকে ইচ্ছা সাহায্য করেন এবং তিনি পরাক্রমশালী, পরম দয়ালু

[30:6]

আল্লাহর প্রতিশ্রুতি হয়ে গেছেআল্লাহ তার প্রতিশ্রুতি খেলাফ করবেন নাকিন্তু অধিকাংশ লোক জানে না

[30:7]

তারা পার্থিব জীবনের বাহ্যিক দিক জানে এবং তারা পরকালের খবর রাখে না

[30:8]

তারা কি তাদের মনে ভেবে দেখে না যে, আল্লাহ নভোমন্ডল, ভূমন্ডল ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছু সৃষ্টি করেছেন যথাযথরূপে ও নির্দিষ্ট সময়ের জন্য, কিন্তু অনেক মানুষ তাদের পালনকর্তার সাক্ষাতে অবিশ্বাসী

[30:9]

তারা কি পৃথিবীতে ভ্রমণ করে না অতঃপর দেখে না যে; তাদের পূর্ববর্তীদের পরিণাম কি কি হয়েছে? তারা তাদের চাইতে শক্তিশালী ছিল, তারা যমীন চাষ করত এবং তাদের চাইতে বেশী আবাদ করততাদের কাছে তাদের রসূলগণ সুস্পষ্ট নির্দেশ নিয়ে এসেছিলবস্তুতঃ আল্লাহ তাদের প্রতি জুলুমকারী ছিলেন নাকিন্তু তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতি জুলুম করেছিল

[30:10]

অতঃপর যারা মন্দ কর্ম করত, তাদের পরিণাম হয়েছে মন্দকারণ, তারা আল্লাহর আয়াতসমূহকে মিথ্যা বলত এবং সেগুলো নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করত

[30:11]

আল্লাহ প্রথমবার সৃষ্টি করেন, অতঃপর তিনি পুনরায় সৃষ্টি করবেনএরপর তোমরা তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তিত হবে

[30:12]

যে দিন কেয়ামত সংঘটিত হবে, সেদিন অপরাধীরা হতাশ হয়ে যাবে

[30:13]

তাদের দেবতা গুলোর মধ্যে কেউ তাদের সুপারিশ করবে নাএবং তারা তাদের দেবতাকে অস্বীকার করবে

[30:14]

যেদিন কেয়ামত সংঘটিত হবে, সেদিন মানুষ বিভক্ত হয়ে পড়বে

[30:15]

যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে ও ৎকর্ম করেছে, তারা জান্নাতে সমাদৃত হবে;

[30:16]

আর যারা কাফের এবং আমার আয়াতসমূহ ও পরকালের সাক্ষাতকারকে মিথ্যা বলছে, তাদেরকেই আযাবের মধ্যে উপস্থিত করা হবে

[30:17]

অতএব, তোমরা আল্লাহর পবিত্রতা স্মরণ কর সন্ধ্যায় ও সকালে,

[30:18]

এবং অপরাহে? ও মধ্যাহে? নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলে, তাঁরই প্রসংসা

[30:19]

তিনি মৃত থেকে জীবিতকে বহির্গত করেন জীবিত থেকে মৃতকে বহির্গত করেন, এবং ভূমির মৃত্যুর পর তাকে পুনরুজ্জীবিত করেনএভাবে তোমরা উত্থিত হবে

[30:20]

তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে এক নিদর্শন এই যে, তিনি মৃত্তিকা থেকে তোমাদের সৃষ্টি করেছেনএখন তোমরা মানুষ, পৃথিবীতে ছড়িয়ে আছ

[30:21]

আর এক নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্যে তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সংগিনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাক এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেননিশ্চয় এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে

[30:22]

তাঁর আর ও এক নিদর্শন হচ্ছে নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের সৃজন এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্রনিশ্চয় এতে জ্ঞানীদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে

[30:23]

তাঁর আরও নিদর্শনঃ রাতে ও দিনে তোমাদের নিদ্রা এবং তাঁর কৃপা অন্বেষণনিশ্চয় এতে মনোযোগী সম্প্রদায়ের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে

[30:24]

তাঁর আরও নিদর্শনঃ তিনি তোমাদেরকে দেখান বিদ্যু, ভয় ও ভরসার জন্যে এবং আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন, অতঃপর তদ্দ্বারা ভূমির মৃত্যুর পর তাকে পুনরুজ্জীবিত করেননিশ্চয় এতে বুদ্ধিমান লোকদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে

[30:25]

তাঁর অন্যতম নিদর্শন এই যে, তাঁরই আদেশে আকাশ ও পৃথিবী প্রতিষ্ঠিত আছেঅতঃপর যখন তিনি মৃত্তিকা থেকে উঠার জন্যে তোমাদের ডাক দেবেন, তখন তোমরা উঠে আসবে

[30:26]

নভোমন্ডলে ও ভুমন্ডলে যা কিছু আছে, সব তাঁরইসবাই তাঁর আজ্ঞাবহ

[30:27]

তিনিই প্রথমবার সৃষ্টিকে অস্তিত্বে আনয়ন করেন, অতঃপর তিনি সৃষ্টি করবেনএটা তাঁর জন্যে সহজআকাশ ও পৃথিবীতে সর্বোচ্চ মর্যাদা তাঁরই এবং তিনিই পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়

[30:28]

আল্লাহ তোমাদের জন্যে তোমাদেরই মধ্য থেকে একটি দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেনঃ তোমাদের আমি যে রুযী দিয়েছি, তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীরা কি তাতে তোমাদের সমান সমান অংশীদার? তোমরা কি তাদেরকে সেরূপ ভয় কর, যেরূপ নিজেদের লোককে ভয় কর? এমনিভাবে আমি সমঝদার সম্প্রদায়ের জন্যে নিদর্শনাবলী বিস্তারিত বর্ণনা করি

[30:29]

বরং যারা যে-ইনসাফ, তারা অজ্ঞানতাবশতঃ তাদের খেয়াল-খূশীর অনুসরণ করে থাকেঅতএব, আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তাকে কে বোঝাবে? তাদের কোন সাহায্যকারী নেই

[30:30]

তুমি একনিষ্ঠ ভাবে নিজেকে ধর্মের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখএটাই আল্লাহর প্রকৃতি, যার উপর তিনি মানব সৃষ্টি করেছেনআল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেইএটাই সরল ধর্মকিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না

[30:31]

সবাই তাঁর অভিমুখী হও এবং ভয় কর, নামায কায়েম কর এবং মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না

[30:32]

যারা তাদের ধর্মে বিভেদ সৃষ্টি করেছে এবং অনেক দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছেপ্রত্যেক দলই নিজ নিজ মতবাদ নিয়ে উল্লসিত

[30:33]

মানুষকে যখন দুঃখ-কষ্ট স্পর্শ করে, তখন তারা তাদের পালনকর্তাকে আহবান করে তাঁরই অভিমুখী হয়েঅতঃপর তিনি যখন তাদেরকে রহমতের স্বাদ আস্বাদন করান, তখন তাদের একদল তাদের পালনকর্তার সাথে শিরক করতে থাকে,

[30:34]

যাতে তারা অস্বীকার করে যা আমি তাদেরকে দিয়েছিঅতএব, মজা লুটে নাও, সত্বরই জানতে পারবে

[30:35]

আমি কি তাদের কাছে এমন কোন দলীল নাযিল করেছি, যে তাদেরকে আমার শরীক করতে বলে?

[30:36]

আর যখন আমি মানুষকে রহমতের স্বাদ আস্বাদন করাই, তারা তাতে আনন্দিত হয় এবং তাদের কৃতকর্মের ফলে যদি তাদেরকে কোন দুদর্শা পায়, তবে তারা হতাশ হয়ে পড়ে

[30:37]

তারা কি দেখে না যে, আল্লাহ যার জন্যে ইচ্ছা রিযিক বর্ধিত করেন এবং হ্রাস করেননিশ্চয় এতে বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে

[30:38]

আত্নীয়-স্বজনকে তাদের প্রাপ্য দিন এবং মিসকীন ও মুসাফিরদেরওএটা তাদের জন্যে উত্তম, যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করেতারাই সফলকাম

[30:39]

মানুষের ধন-সম্পদে তোমাদের ধন-সম্পদ বৃদ্ধি পাবে, এই আশায় তোমরা সুদে যা কিছু দাও, আল্লাহর কাছে তা বৃদ্ধি পায় নাপক্ষান্তরে, আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় পবিত্র অন্তরে যারা দিয়ে থাকে, অতএব, তারাই দ্বিগুণ লাভ করে

[30:40]

আল্লাহই তোমাদের সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর রিযিক দিয়েছেন, এরপর তোমাদের মৃত্যু দেবেন, এরপর তোমাদের জীবিত করবেনতোমাদের শরীকদের মধ্যে এমন কেউ আছে কি, যে এসব কাজের মধ্যে কোন একটিও করতে পারবে? তারা যাকে শরীক করে, আল্লাহ তা থেকে পবিত্র ও মহান

[30:41]

স্থলে ও জলে মানুষের কৃতকর্মের দরুন বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছেআল্লাহ তাদেরকে তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা ফিরে আসে

[30:42]

বলুন, তোমরা পৃথিবীতে পরিভ্রমণ কর এবং দেখ তোমাদের পুর্ববর্তীদের পরিণাম কি হয়েছেতাদের অধিকাংশই ছিল মুশরিক

[30:43]

যে দিবস আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রত্যাহূত হবার নয়, সেই দিবসের পূর্বে আপনি সরল ধর্মে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করুন সেদিন মানুষ বিভক্ত হয়ে পড়বে

[30:44]

যে কুফরী করে, তার কফুরের জন্যে সে-ই দায়ী এবং যে সৎকর্ম করে, তারা নিজেদের পথই শুধরে নিচ্ছে

[30:45]

যারা বিশ্বাস করেছে ও সৎকর্ম করেছে যাতে, আল্লাহ তাআলা তাদেরকে নিজ অনুগ্রহে প্রতিদান দেননিশ্চয় তিনি কাফেরদের ভালবাসেন না

[30:46]

তাঁর নিদর্শনসমূহের মধ্যে একটি এই যে, তিনি সুসংবাদবাহী বায়ু প্রেরণ করেন, যাতে তিনি তাঁর অনুগ্রহ তোমাদের আস্বাদন করান এবং যাতে তাঁর নির্দেশে জাহাজসমূহ বিচরণ করে এবং যাতে তোমরা তাঁর অনুগ্রহ তালাশ কর এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ হও

[30:47]

আপনার পূর্বে আমি রসূলগণকে তাঁদের নিজ নিজ সম্প্রদায়ের কাছে প্রেরণ করেছিতাঁরা তাদের কাছে সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী নিয়ে আগমন করেনঅতঃপর যারা পাপী ছিল, তাদের আমি শাস্তি দিয়েছি মুমিনদের সাহায্য করা আমার দায়িত্ব

[30:48]

তিনি আল্লাহ, যিনি বায়ু প্রেরণ করেন, অতঃপর তা মেঘমালাকে সঞ্চারিত করেঅতঃপর তিনি মেঘমালাকে যেভাবে ইচ্ছা আকাশে ছড়িয়ে দেন এবং তাকে স্তরে স্তরে রাখেনএরপর তুমি দেখতে পাও তার মধ্য থেকে নির্গত হয় বৃষ্টিধারাতিনি তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাদেরকে ইচ্ছা পৌঁছান; তখন তারা আনন্দিত হয়

[30:49]

তারা প্রথম থেকেই তাদের প্রতি এই বৃষ্টি বর্ষিত হওয়ার পূর্বে নিরাশ ছিল

[30:50]

অতএব, আল্লাহর রহমতের ফল দেখে নাও, কিভাবে তিনি মৃত্তিকার মৃত্যুর পর তাকে জীবিত করেননিশ্চয় তিনি মৃতদেরকে জীবিত করবেন এবং তিনি সব কিছুর উপর সর্বশক্তিমান

[30:51]

আমি যদি এমন বায়ু প্রেরণ করি যার ফলে তারা শস্যকে হলদে হয়ে যেতে দেখে, তখন তো তারা অবশ্যই অকৃতজ্ঞ হয়ে যায়

[30:52]

অতএব, আপনি মৃতদেরকে শোনাতে পারবেন না এবং বধিরকেও আহবান শোনাতে পারবেন না, যখন তারা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে

[30:53]

আপনি অন্ধদেরও তাদের পথভ্রষ্টতা থেকে পথ দেখাতে পারবেন নাআপনি কেবল তাদেরই শোনাতে পারবেন, যারা আমার আয়াতসমূহে বিশ্বাস করেকারন তারা মুসলমান

[30:54]

আল্লাহ তিনি দূর্বল অবস্থায় তোমাদের সৃষ্টি করেন অতঃপর দূর্বলতার পর শক্তিদান করেন, অতঃপর শক্তির পর দেন দুর্বলতা ও বার্ধক্যতিনি যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন এবং তিনি সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান

[30:55]

যেদিন কেয়ামত সংঘটিত হবে, সেদিন অপরাধীরা কসম খেয়ে বলবে যে, এক মুহুর্তেরও বেশী অবস্থান করিনিএমনিভাবে তারা সত্যবিমুখ হত

[30:56]

যাদের জ্ঞান ও ঈমান দেয়া হয়েছে, তারা বলবে আমরা আল্লাহর কিতাব মতে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত অবস্থান করেছিএটাই পুনরুত্থান দিবস, কিন্তু তোমরা তা জানতে না

[30:57]

সেদিন জালেমদের ওযর-আপত্তি তাদের কোন উপকারে আসবে না এবং তওবা করে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের সুযোগও তাদের দেয়া হবে না

[30:58]

আমি এই কোরআনে মানুষের জন্য সর্বপ্রকার দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছিআপনি যদি তাদের কাছে কোন নিদর্শন উপস্থিত করেন, তবে কাফেররা অবশ্যই বলবে, তোমরা সবাই মিথ্যাপন্থী

[30:59]

এমনিভাবে আল্লাহ জ্ঞানহীনদের হৃদয় মোহরাঙ্কিত করে দেন

[30:60]

অতএব, আপনি সবর করুনআল্লাহর ওয়াদা সত্যযারা বিশ্বাসী নয়, তারা যেন আপনাকে বিচলিত করতে না পারে

 

31 Luqmân

 শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু

[31:1]

আলিফ-লাম-মীম

[31:2]

এগুলো প্রজ্ঞাময় কিতাবের আয়াত

[31:3]

হেদায়েত ও রহমত ৎকর্মপরায়ণদের জন্য

[31:4]

যারা সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আখেরাত সম্পর্কে দৃঢ় বিশ্বাস রাখে

[31:5]

এসব লোকই তাদের পরওয়ারদেগারের তরফ থেকে আগত হেদায়েতের উপর প্রতিষ্ঠিত এবং এরাই সফলকাম

[31:6]

একশ্রেণীর লোক আছে যারা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে গোমরাহ করার উদ্দেশে অবান্তর কথাবার্তা সংগ্রহ করে অন্ধভাবে এবং উহাকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করেএদের জন্য রয়েছে অবমাননাকর শাস্তি

[31:7]

যখন ওদের সামনে আমার আয়তসমূহ পাঠ করা হয়, তখন ওরা দম্ভের সাথে এমনভাবে মুখ ফিরিয়ে নেয়, যেন ওরা তা শুনতেই পায়নি অথবা যেন ওদের দুকান বধিরসুতরাং ওদেরকে কষ্টদায়ক আযাবের সংবাদ দাও

[31:8]

যারা ঈমান আনে আর সৎকাজ করে তাদের জন্য রয়েছে নেয়ামতে ভরা জান্নাত

[31:9]

সেখানে তারা চিরকাল থাকবে আল্লাহর ওয়াদা যথার্থতিনি পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়

[31:10]

তিনি খুঁটি ব্যতীত আকাশমন্ডলী সৃষ্টি করেছেন; তোমরা তা দেখছতিনি পৃথিবীতে স্থাপন করেছেন পর্বতমালা, যাতে পৃথিবী তোমাদেরকে নিয়ে ঢলে না পড়ে এবং এতে ছড়িয়ে দিয়েছেন সর্বপ্রকার জন্তু আমি আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছি, অতঃপর তাতে উদগত করেছি সর্বপ্রকার কল্যাণকর উদ্ভিদরাজি

[31:11]

এটা আল্লাহর সৃষ্টি; অতঃপর তিনি ব্যতীত অন্যেরা যা সৃষ্টি করেছে, তা আমাকে দেখাওবরং জালেমরা সুস্পষ্ট পথভ্রষ্টতায় পতিত আছে

[31:12]

আমি লোকমানকে প্রজ্ঞা দান করেছি এই মর্মে যে, আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হওযে কৃতজ্ঞ হয়, সে তো কেবল নিজ কল্যানের জন্যই কৃতজ্ঞ হয়আর যে অকৃতজ্ঞ হয়, আল্লাহ অভাবমুক্ত, প্রশংসিত

[31:13]

যখন লোকমান উপদেশচ্ছলে তার পুত্রকে বললঃ হে বৎস, আল্লাহর সাথে শরীক করো নানিশ্চয় আল্লাহর সাথে শরীক করা মহা অন্যায়

[31:14]

আর আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহারের জোর নির্দেশ দিয়েছিতার মাতা তাকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেছেতার দুধ ছাড়ানো দু বছরে হয়নির্দেশ দিয়েছি যে, আমার প্রতি ও তোমার পিতা-মতার প্রতি কৃতজ্ঞ হওঅবশেষে আমারই নিকট ফিরে আসতে হবে

[31:15]

পিতা-মাতা যদি তোমাকে আমার সাথে এমন বিষয়কে শরীক স্থির করতে পীড়াপীড়ি করে, যার জ্ঞান তোমার নেই; তবে তুমি তাদের কথা মানবে না এবং দুনিয়াতে তাদের সাথে সদ্ভাবে সহঅবস্থান করবেযে আমার অভিমুখী হয়, তার পথ অনুসরণ করবেঅতঃপর তোমাদের প্রত্যাবর্তন আমারই দিকে এবং তোমরা যা করতে, আমি সে বিষয়ে তোমাদেরকে জ্ঞাত করবো

[31:16]

হে বৎস, কোন বস্তু যদি সরিষার দানা পরিমাণও হয় অতঃপর তা যদি থাকে প্রস্তর গর্ভে অথবা আকাশে অথবা ভূ-গর্ভে, তবে আল্লাহ তাও উপস্থিত করবেননিশ্চয় আল্লাহ গোপন ভেদ জানেন, সবকিছুর খবর রাখেন

[31:17]

হে বৎস, নামায কায়েম কর, ৎকাজে আদেশ দাও, মন্দকাজে নিষেধ কর এবং বিপদাপদে সবর করনিশ্চয় এটা সাহসিকতার কাজ

[31:18]

অহংকারবশে তুমি মানুষকে অবজ্ঞা করো না এবং পৃথিবীতে গর্বভরে পদচারণ করো নানিশ্চয় আল্লাহ কোন দাম্ভিক অহংকারীকে পছন্দ করেন না

[31:19]

পদচারণায় মধ্যবর্তিতা অবলম্বন কর এবং কন্ঠস্বর নীচু করনিঃসন্দেহে গাধার স্বরই সর্বাপেক্ষা অপ্রীতিকর

[31:20]

তোমরা কি দেখ না আল্লাহ নভোমন্ডল ও ভূ-মন্ডলে যাকিছু আছে, সবই তোমাদের কাজে নিয়োজিত করে দিয়েছেন এবং তোমাদের প্রতি তাঁর প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য নেয়ামতসমূহ পরিপূর্ন করে দিয়েছেন? এমন লোক ও আছে; যারা জ্ঞান, পথনির্দেশ ও উজ্জল কিতাব ছাড়াই আল্লাহ সম্পর্কে বাকবিতন্ডা করে

[31:21]

তাদেরকে যখন বলা হয়, আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, তোমরা তার অনুসরণ কর, তখন তারা বলে, বরং আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে যে বিষয়ের উপর পেয়েছি, তারই অনুসরণ করবশয়তান যদি তাদেরকে জাহান্নামের শাস্তির দিকে দাওয়াত দেয়, তবুও কি?

[31:22]

যে ব্যক্তি সৎকর্মপরায়ণ হয়ে স্বীয় মুখমন্ডলকে আল্লাহ অভিমূখী করে, সে এক মজবুত হাতল ধারণ করে, সকল কর্মের পরিণাম আল্লাহর দিকে

[31:23]

যে ব্যক্তি কুফরী করে তার কুফরী যেন আপনাকে চিন্তিত না করেআমারই দিকে তাদের প্রত্যাবর্তন, অতঃপর আমি তাদের কর্ম সম্পর্কে তাদেরকে অবহিত করবঅন্তরে যা কিছু রয়েছে, সে সম্পর্কে আল্লাহ সবিশেষ পরিজ্ঞাত

[31:24]

আমি তাদেরকে স্বল্পকালের জন্যে ভোগবিলাস করতে দেব, অতঃপর তাদেরকে বাধ্য করব গুরুতর শাস্তি ভোগ করতে

[31:25]

আপনি যদি তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন, নভোমন্ডল ও ভূ-মন্ডল কে সৃষ্টি করেছে? তারা অবশ্যই বলবে, আল্লাহবলুন, সকল প্রশংসাই আল্লাহরবরং তাদের অধিকাংশই জ্ঞান রাখে না

[31:26]

নভোমন্ডল ও ভূ-মন্ডলে যা কিছু রয়েছে সবই আল্লাহরআল্লাহ অভাবমুক্ত, প্রশংসিত

[31:27]

পৃথিবীতে যত বৃক্ষ আছে, সবই যদি কলম হয় এবং সমুদ্রের সাথেও সাত সমুদ্র যুক্ত হয়ে কালি হয়, তবুও তাঁর বাক্যাবলী লিখে শেষ করা যাবে নানিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়

[31:28]

তোমাদের সৃষ্টি ও পুনরুত্থান একটি মাত্র প্রাণীর সৃষ্টি ও পুনরুত্থানের সমান বৈ নয়নিশ্চয় আল্লাহ সব কিছু শোনেন, সবকিছু দেখেন

[31:29]

তুমি কি দেখ না যে, আল্লাহ রাত্রিকে দিবসে প্রবিষ্ট করেন এবং দিবসকে রাত্রিতে প্রবিষ্ট করেন? তিনি চন্দ্র ও সূর্যকে কাজে নিয়োজিত করেছেনপ্রত্যেকেই নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত পরিভ্রমণ করে তুমি কি আরও দেখ না যে, তোমরা যা কর, আল্লাহ তার খবর রাখেন?

[31:30]

এটাই প্রমাণ যে, আল্লাহ-ই সত্য এবং আল্লাহ ব্যতীত তারা যাদের পূজা করে সব মিথ্যাআল্লাহ সর্বোচ্চ, মহান

[31:31]

তুমি কি দেখ না যে, আল্লাহর অনুগ্রহে জাহাজ সমুদ্রে চলাচল করে, যাতে তিনি তোমাদেরকে তাঁর নিদর্শনাবলী প্রদর্শন করেন? নিশ্চয় এতে প্রত্যেক সহনশীল, কৃতজ্ঞ ব্যক্তির জন্যে নিদর্শন রয়েছে

[31:32]

যখন তাদেরকে মেঘমালা সদৃশ তরংগ আচ্ছাদিত করে নেয়, তখন তারা খাঁটি মনে আল্লাহকে ডাকতে থাকেঅতঃপর তিনি যখন তাদেরকে স্থলভাগের দিকে উদ্ধার করে আনেন, তখন তাদের কেউ কেউ সরল পথে চলেকেবল মিথ্যাচারী, অকৃতজ্ঞ ব্যক্তিই আমার নিদর্শনাবলী অস্বীকার করে

[31:33]

হে মানব জাতি! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর এবং ভয় কর এমন এক দিবসকে, যখন পিতা পুত্রের কোন কাজে আসবে না এবং পুত্রও তার পিতার কোন উপকার করতে পারবে নানিঃসন্দেহে আল্লাহর ওয়াদা সত্যঅতএব, পার্থিব জীবন যেন তোমাদেরকে ধোঁকা না দেয় এবং আল্লাহ সম্পর্কে প্রতারক শয়তানও যেন তোমাদেরকে প্রতারিত না করে

[31:34]

নিশ্চয় আল্লাহর কাছেই কেয়ামতের জ্ঞান রয়েছেতিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং গর্ভাশয়ে যা থাকে, তিনি তা জানেনকেউ জানে না আগামীকল্য সে কি উপার্জন করবে এবং কেউ জানে না কোন দেশে সে মৃত্যুবরণ করবেআল্লাহ সর্বজ্ঞ, সর্ববিষয়ে সম্যক জ্ঞাত

 

32 As-Sajdah

 শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু

[32:1]

আলিফ-লাম-মীম

[32:2]

এ কিতাবের অবতরণ বিশ্বপালনকর্তার নিকট থেকে এতে কোন সন্দেহ নেই

[32:3]

তারা কি বলে, এটা সে মিথ্যা রচনা করেছে? বরং এটা আপনার পালনকর্তার তরফ থেকে সত্য, যাতে আপনি এমন এক সম্প্রদায়কে সতর্ক করেন, যাদের কাছে আপনার পূর্বে কোন সতর্ককারী আসেনিসম্ভবতঃ এরা সুপথ প্রাপ্ত হবে

[32:4]

আল্লাহ যিনি নভোমন্ডল, ভুমন্ডল ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছু ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তিনি আরশে বিরাজমান হয়েছেনতিনি ব্যতীত তোমাদের কোন অভিভাবক ও সুপারিশকারী নেইএরপরও কি তোমরা বুঝবে না?

[32:5]

তিনি আকাশ থেকে পৃথিবী পর্যন্ত সমস্ত কর্ম পরিচালনা করেন, অতঃপর তা তাঁর কাছে পৌছবে এমন এক দিনে, যার পরিমাণ তোমাদের গণনায় হাজার বছরের সমান

[32:6]

তিনিই দৃশ্য ও অদৃশ্যের জ্ঞানী, পরাক্রমশালী, পরম দয়ালু,

[32:7]

যিনি তাঁর প্রত্যেকটি সৃষ্টিকে সুন্দর করেছেন এবং কাদামাটি থেকে মানব সৃষ্টির সূচনা করেছেন

[32:8]

অতঃপর তিনি তার বংশধর সৃষ্টি করেন তুচ্ছ পানির নির্যাস থেকে

[32:9]

অতঃপর তিনি তাকে সুষম করেন, তাতে রূহ সঞ্চার করেন এবং তোমাদেরকে দেন কর্ণ, চক্ষু ও অন্তঃকরণতোমরা সামান্যই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর

[32:10]

তারা বলে, আমরা মৃত্তিকায় মিশ্রিত হয়ে গেলেও পুনরায় নতুন করে সৃজিত হব কি? বরং তারা তাদের পালনকর্তার সাক্ষাতকে অস্বীকার করে

[32:11]

বলুন, তোমাদের প্রাণ হরণের দায়িত্বে নিয়োজিত ফেরেশতা তোমাদের প্রাণ হরণ করবেঅতঃপর তোমরা তোমাদের পালনকর্তার কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে

[32:12]

যদি আপনি দেখতেন যখন অপরাধীরা তাদের পালনকর্তার সামনে নতশির হয়ে বলবে, হে আমাদের পালনকর্তা, আমরা দেখলাম ও শ্রবণ করলামএখন আমাদেরকে পাঠিয়ে দিন, আমরা সৎকর্ম করবআমরা দৃঢ়বিশ্বাসী হয়ে গেছি

[32:13]

আমি ইচ্ছা করলে প্রত্যেককে সঠিক দিক নির্দেশ দিতাম; কিন্তু আমার এ উক্তি অবধারিত সত্য যে, আমি জিন ও মানব সকলকে দিয়ে অবশ্যই জাহান্নাম পূর্ণ করব

[32:14]

অতএব এ দিবসকে ভূলে যাওয়ার কারণে তোমরা মজা আস্বাদন করআমিও তোমাদেরকে ভুলে গেলামতোমরা তোমাদের কৃতকর্মের কারণে স্থায়ী আযাব ভোগ কর

[32:15]

কেবল তারাই আমার আয়াতসমূহের প্রতি ঈমান আনে, যারা আয়াতসমূহ দ্বারা উপদেশপ্রাপ্ত হয়ে সেজদায় লুটিয়ে পড়ে এবং অহংকারমুক্ত হয়ে তাদের পালনকর্তার সপ্রশংস পবিত্রতা বর্ণনা করে[ Sajdah ]

[32:16]

তাদের পার্শ্ব শয্যা থেকে আলাদা থাকেতারা তাদের পালনকর্তাকে ডাকে ভয়ে ও আশায় এবং আমি তাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি, তা থেকে ব্যয় করে

[32:17]

কেউ জানে না তার জন্যে কৃতকর্মের কি কি নয়ন-প্রীতিকর প্রতিদান লুক্কায়িত আছে

[32:18]

ঈমানদার ব্যক্তি কি অবাধ্যের অনুরূপ? তারা সমান নয়

[32:19]

যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, তাদের জন্যে রয়েছে তাদের কৃতকর্মের আপ্যায়নস্বরূপ বসবাসের জান্নাত

[32:20]

পক্ষান্তরে যারা অবাধ্য হয়, তাদের ঠিকানা জাহান্নামযখনই তারা জাহান্নাম থেকে বের হতে চাইবে, তখনই তাদেরকে তথায় ফিরিয়ে দেয়া হবে এবং তাদেরকে বলা হবে, তোমরা জাহান্নামের যে আযাবকে মিথ্যা বলতে, তার স্বাদ আস্বাদন কর

[32:21]

গুরু শাস্তির পূর্বে আমি অবশ্যই তাদেরকে লঘু শাস্তি আস্বাদন করাব, যাতে তারা প্রত্যাবর্তন করে

[32:22]

যে ব্যক্তিকে তার পালনকর্তার আয়াতসমূহ দ্বারা উপদেশ দান করা হয়, অতঃপর সে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তার চেয়ে যালেম আর কে? আমি অপরাধীদেরকে শাস্তি দেব

[32:23]

আমি মূসাকে কিতাব দিয়েছি, অতএব আপনি কোরআন প্রাপ্তির বিষয়ে কোন সন্দেহ করবেন নাআমি একে বনী ইসরাঈলের জন্যে পথ প্রদর্শক করেছিলাম

[32:24]

তারা সবর করত বিধায় আমি তাদের মধ্য থেকে নেতা মনোনীত করেছিলাম, যারা আমার আদেশে পথ প্রদর্শন করততারা আমার আয়াতসমূহে দৃঢ় বিশ্বাসী ছিল

[32:25]

তারা যে বিষয়ে মত বিরোধ করছে, আপনার পালনকর্তাই কেয়ামতের দিন সে বিষয়ে তাদের মধ্যে ফয়সালা দেবেন

[32:26]

এতে কি তাদের চোখ খোলেনি যে, আমি তাদের পূর্বে অনেক সম্প্রদায়কে ধ্বংস করেছি, যাদের বাড়ী-ঘরে এরা বিচরণ করেঅবশ্যই এতে নিদর্শনাবলী রয়েছেতারা কি শোনে না?

[32:27]

তারা কি লক্ষ্য করে না যে, আমি উষর ভূমিতে পানি প্রবাহিত করে শস্য উদগত করি, যা থেকে ভক্ষণ করে তাদের জন্তুরা এবং তারা কি দেখে না?

[32:28]

তারা বলে তোমরা সত্যবাদী হলে বল; কবে হবে এই ফয়সালা?

[32:29]

বলুন, ফয়সালার দিনে কাফেরদের ঈমান তাদের কোন কাজে আসবে না এবং তাদেরকে অবকাশ ও দেয়া হবে না

[32:30]

অতএব আপনি তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিন এবং অপেক্ষা করুন, তারাও অপেক্ষা করছে

 

33 Al-Ahzâb

 শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু

[33:1]

হে নবী! আল্লাহকে ভয় করুন এবং কাফের ও কপট বিশ্বাসীদের কথা মানবেন নানিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়

[33:2]

আপনার পালনকর্তার পক্ষ থেকে যা অবতীর্ণ হয়, আপনি তার অনুসরণ করুননিশ্চয় তোমরা যা কর, আল্লাহ সে বিষয়ে খবর রাখেন

[33:3]

আপনি আল্লাহর উপর ভরসা করুন কার্যনির্বাহীরূপে আল্লাহই যথেষ্ট

[33:4]

আল্লাহ কোন মানুষের মধ্যে দুটি হৃদয় স্থাপন করেননিতোমাদের স্ত্রীগণ যাদের সাথে তোমরা যিহার কর, তাদেরকে তোমাদের জননী করেননি এবং তোমাদের পোষ্যপুত্রদেরকে তোমাদের পুত্র করেননিএগুলো তোমাদের মুখের কথা মাত্রআল্লাহ ন্যায় কথা বলেন এবং পথ প্রদর্শন করেন

[33:5]

তোমরা তাদেরকে তাদের পিতৃপরিচয়ে ডাকএটাই আল্লাহর কাছে ন্যায়সঙ্গতযদি তোমরা তাদের পিতৃ-পরিচয় না জান, তবে তারা তোমাদের ধর্মীয় ভাই ও বন্ধুরূপে গণ্য হবেএ ব্যাপারে তোমাদের কোন বিচ্যুতি হলে তাতে তোমাদের কোন গোনাহ নেই, তবে ইচ্ছাকৃত হলে ভিন্ন কথা আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু

[33:6]

নবী মুমিনদের নিকট তাদের নিজেদের অপেক্ষা অধিক ঘনিষ্ঠ এবং তাঁর স্ত্রীগণ তাদের মাতাআল্লাহর বিধান অনুযায়ী মুমিন ও মুহাজিরগণের মধ্যে যারা আত্নীয়, তারা পরস্পরে অধিক ঘনিষ্ঠ তবে তোমরা যদি তোমাদের বন্ধুদের প্রতি দয়া-দাক্ষিণ্য করতে চাও, করতে পারএটা লওহে-মাহফুযে লিখিত আছে

[33:7]

যখন আমি পয়গম্বরগণের কাছ থেকে, আপনার কাছ থেকে এবং নূহ, ইব্রাহীম, মূসা ও মরিয়ম তনয় ঈসার কাছ থেকে অঙ্গীকার নিলাম এবং অঙ্গীকার নিলাম তাদের কাছ থেকে দৃঢ় অঙ্গীকার

[33:8]

সত্যবাদীদেরকে তাদের সত্যবাদিতা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করার জন্যতিনি কাফেরদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন

[33:9]

হে মুমিনগণ! তোমরা তোমাদের প্রতি আল্লাহর নেয়ামতের কথা স্মরণ কর, যখন শত্রুবাহিনী তোমাদের নিকটবর্তী হয়েছিল, অতঃপর আমি তাদের বিরুদ্ধে ঝঞ্চাবায়ু এবং এমন সৈন্যবাহিনী প্রেরণ করেছিলাম, যাদেরকে তোমরা দেখতে নাতোমরা যা কর, আল্লাহ তা দেখেন

[33:10]

যখন তারা তোমাদের নিকটবর্তী হয়েছিল উচ্চ ভূমি ও নিম্নভূমি থেকে এবং যখন তোমাদের দৃষ্টিভ্রম হচ্ছিল, প্রাণ কন্ঠাগত হয়েছিল এবং তোমরা আল্লাহ সম্পর্কে নানা বিরূপ ধারণা পোষণ করতে শুরু করছিলে

[33:11]

সে সময়ে মুমিনগণ পরীক্ষিত হয়েছিল এবং ভীষণভাবে প্রকম্পিত হচ্ছিল

[33:12]

এবং যখন মুনাফিক ও যাদের অন্তরে রোগ ছিল তারা বলছিল, আমাদেরকে প্রদত্ত আল্লাহ ও রসূলের প্রতিশ্রুতি প্রতারণা বৈ নয়

[33:13]

এবং যখন তাদের একদল বলেছিল, হে ইয়াসরেববাসী, এটা টিকবার মত জায়গা নয়, তোমরা ফিরে চলতাদেরই একদল নবীর কাছে অনুমতি প্রার্থনা করে বলেছিল, আমাদের বাড়ী-ঘর খালি, অথচ সেগুলো খালি ছিল না, পলায়ন করাই ছিল তাদের ইচ্ছা

[33:14]

যদি শত্রুপক্ষ চতুর্দিক থেকে নগরে প্রবেশ করে তাদের সাথে মিলিত হত, অতঃপর বিদ্রোহ করতে প্ররোচিত করত, তবে তারা অবশ্যই বিদ্রোহ করত এবং তারা মোটেই বিলম্ব করত না

[33:15]

অথচ তারা পূর্বে আল্লাহর সাথে অঙ্গীকার করেছিল যে, তারা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে নাআল্লাহর অঙ্গীকার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে

[33:16]

বলুন! তোমরা যদি মৃত্যু অথবা হত্যা থেকে পলায়ন কর, তবে এ পলায়ন তোমাদের কাজে আসবে নাতখন তোমাদেরকে সামান্যই ভোগ করতে দেয়া হবে

[33:17]

বলুন! কে তোমাদেরকে আল্লাহ থেকে রক্ষা করবে যদি তিনি তোমাদের অমঙ্গল ইচ্ছা করেন অথবা তোমাদের প্রতি অনুকম্পার ইচ্ছা? তারা আল্লাহ ব্যতীত নিজেদের কোন অভিভাবক ও সাহায্যদাতা পাবে না

[33:18]

আল্লাহ খুব জানেন তোমাদের মধ্যে কারা তোমাদেরকে বাধা দেয় এবং কারা তাদের ভাইদেরকে বলে, আমাদের কাছে এস তারা কমই যুদ্ধ করে

[33:19]

তারা তোমাদের প্রতি কুন্ঠাবোধ করেযখন বিপদ আসে, তখন আপনি দেখবেন মৃত্যুভয়ে অচেতন ব্যক্তির মত চোখ উল্টিয়ে তারা আপনার প্রতি তাকায়অতঃপর যখন বিপদ টলে যায় তখন তারা ধন-সম্পদ লাভের আশায় তোমাদের সাথে বাকচাতুরীতে অবতীর্ণ হয়তারা মুমিন নয়তাই আল্লাহ তাদের কর্মসমূহ নিস্ফল করে দিয়েছেনএটা আল্লাহর জন্যে সহজ

[33:20]

তারা মনে করে শক্রবাহিনী চলে যায়নিযদি শক্রবাহিনী আবার এসে পড়ে, তবে তারা কামনা করবে যে, যদি তারা গ্রামবাসীদের মধ্য থেকে তোমাদের সংবাদাদি জেনে নিত, তবেই ভাল হততারা তোমাদের মধ্যে অবস্থান করলেও যুদ্ধ সামান্যই করত

[33:21]

যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তাদের জন্যে রসূলুল্লাহর মধ্যে উত্তম নমুনা রয়েছে

[33:22]

যখন মুমিনরা শক্রবাহিনীকে দেখল, তখন বলল, আল্লাহ ও তাঁর রসূল এরই ওয়াদা আমাদেরকে দিয়েছিলেন এবং আল্লাহ ও তাঁর রসূল সত্য বলেছেনএতে তাদের ঈমান ও আত্নসমর্পণই বৃদ্ধি পেল

[33:23]

মুমিনদের মধ্যে কতক আল্লাহর সাথে কৃত ওয়াদা পূর্ণ করেছেতাদের কেউ কেউ মৃত্যুবরণ করেছে এবং কেউ কেউ প্রতীক্ষা করছেতারা তাদের সংকল্প মোটেই পরিবর্তন করেনি

[33:24]

এটা এজন্য যাতে আল্লাহ, সত্যবাদীদেরকে তাদের সত্যবাদিতার কারণে প্রতিদান দেন এবং ইচ্ছা করলে মুনাফেকদেরকে শাস্তি দেন অথবা ক্ষমা করেননিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু

[33:25]

আল্লাহ কাফেরদেরকে ক্রুদ্ধাবস্থায় ফিরিয়ে দিলেনতারা কোন কল্যাণ পায়নিযুদ্ধ করার জন্য আল্লাহ মুমিনদের জন্যে যথেষ্ট হয়ে গেছেনআল্লাহ শক্তিধর, পরাক্রমশালী

[33:26]

কিতাবীদের মধ্যে যারা কাফেরদের পৃষ্টপোষকতা করেছিল, তাদেরকে তিনি তাদের দূর্গ থেকে নামিয়ে দিলেন এবং তাদের অন্তরে ভীতি নিক্ষেপ করলেনফলে তোমরা একদলকে হত্যা করছ এবং একদলকে বন্দী করছ

[33:27]

তিনি তোমাদেরকে তাদের ভূমির, ঘর-বাড়ীর, ধন-সম্পদের এবং এমন এক ভূ-খন্ডের মালিক করে দিয়েছেন, যেখানে তোমরা অভিযান করনিআল্লাহ সর্ববিষয়োপরি সর্বশক্তিমান

[33:28]

হে নবী, আপনার পত্নীগণকে বলুন, তোমরা যদি পার্থিব জীবন ও তার বিলাসিতা কামনা কর, তবে আস, আমি তোমাদের ভোগের ব্যবস্থা করে দেই এবং উত্তম পন্থায় তোমাদের বিদায় নেই

[33:29]

পক্ষান্তরে যদি তোমরা আল্লাহ, তাঁর রসূল ও পরকাল কামনা কর, তবে তোমাদের সৎকর্মপরায়ণদের জন্য আল্লাহ মহা পুরস্কার প্রস্তুত করে রেখেছেন

[33:30]

হে নবী পত্নীগণ! তোমাদের মধ্যে কেউ প্রকাশ্য অশ্লীল কাজ করলে তাকে দ্বিগুণ শাস্তি দেয়া হবেএটা আল্লাহর জন্য সহজ