Part 20

 

[27:56]

উত্তরে তাঁর কওম শুধু এ কথাটিই বললো, লূত পরিবারকে তোমাদের জনপদ থেকে বের করে দাওএরা তো এমন লোক যারা শুধু পাকপবিত্র সাজতে চায়

[27:57]

অতঃপর তাঁকে ও তাঁর পরিবারবর্গকে উদ্ধার করলাম তাঁর স্ত্রী ছাড়াকেননা, তার জন্যে ধ্বংসপ্রাপ্তদের ভাগ্যই নির্ধারিত করেছিলাম

[27:58]

আর তাদের উপর বর্ষণ করেছিলাম মুষলধারে বৃষ্টিসেই সতর্ককৃতদের উপর কতই না মারাত্নক ছিল সে বৃষ্টি

[27:59]

বল, সকল প্রশংসাই আল্লাহর এবং শান্তি তাঁর মনোনীত বান্দাগণের প্রতি! শ্রেষ্ঠ কে? আল্লাহ না ওরা-তারা যাদেরকে শরীক সাব্যস্ত করে

[27:60]

বল তো কে সৃষ্টি করেছেন নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল এবং আকাশ থেকে তোমাদের জন্যে বর্ষণ করেছেন পানি; অতঃপর তা দ্বারা আমি মনোরম বাগান সৃষ্টি করেছিতার বৃক্ষাদি উৎপন্ন করার শক্তিই তোমাদের নেইঅতএব, আল্লাহর সাথে অন্য কোন উপাস্য আছে কি? বরং তারা সত্যবিচ্যুত সম্প্রদায়

[27:61]

বল তো কে পৃথিবীকে বাসোপযোগী করেছেন এবং তার মাঝে মাঝে নদ-নদী প্রবাহিত করেছেন এবং তাকে স্থিত রাখার জন্যে পর্বত স্থাপন করেছেন এবং দুই সমুদ্রের মাঝখানে অন্তরায় রেখেছেনঅতএব, আল্লাহর সাথে অন্য কোন উপাস্য আছে কি? বরং তাদের অধিকাংশই জানে না

[27:62]

বল তো কে নিঃসহায়ের ডাকে সাড়া দেন যখন সে ডাকে এবং কষ্ট দূরীভূত করেন এবং তোমাদেরকে পৃথিবীতে পুর্ববর্তীদের স্থলাভিষিক্ত করেনসুতরাং আল্লাহর সাথে অন্য কোন উপাস্য আছে কি? তোমরা অতি সামান্যই ধ্যান কর

[27:63]

বল তো কে তোমাদেরকে জলে ও স্থলে অন্ধকারে পথ দেখান এবং যিনি তাঁর অনুগ্রহের পূর্বে সুসংবাদবাহী বাতাস প্রেরণ করেন? অতএব, আল্লাহর সাথে অন্য কোন উপাস্য আছে কি? তারা যাকে শরীক করে, আল্লাহ তা থেকে অনেক ঊর্ধ্বে

[27:64]

বল তো কে প্রথমবার সৃষ্টি করেন, অতঃপর তাকে পুনরায় সৃষ্টি করবেন এবং কে তোমাদেরকে আকাশ ও মর্ত? থেকে রিযিক দান করেনসুতরাং আল্লাহর সাথে অন্য কোন উপাস্য আছে কি? বলুন, তোমরা যদি সত্যবাদী হও তবে তোমাদের প্রমাণ উপস্থিত কর

[27:65]

বলুন, আল্লাহ ব্যতীত নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলে কেউ গায়বের খবর জানে না এবং তারা জানে না যে, তারা কখন পুনরুজ্জীবিত হবে

[27:66]

বরং পরকাল সম্পর্কে তাদের জ্ঞান নিঃশেষ হয়ে গেছে; বরং তারা এ বিষয়ে সন্দেহ পোষন করছে বরং এ বিষয়ে তারা অন্ধ

[27:67]

কাফেররা বলে, যখন আমরা ও আমাদের বাপ-দাদারা মৃত্তিকা হয়ে যাব, তখনও কি আমাদেরকে পুনরুত্থিত করা হবে?

[27:68]

এই ওয়াদাপ্রাপ্ত হয়েছি আমরা এবং পূর্ব থেকেই আমাদের বাপ-দাদারাএটা তো পূর্ববর্তীদের উপকথা বৈ কিছু নয়

[27:69]

বলুন, পৃথিবী পরিভ্রমণ কর এবং দেখ অপরাধীদের পরিণতি কি হয়েছে

[27:70]

তাদের কারণে আপনি দুঃখিত হবেন না এবং তারা যে চক্রান্ত করেছে এতে মনঃক্ষুন্ন হবেন না

[27:71]

তারা বলে, তোমরা যদি সত্যবাদী হও তবে বল, এই ওয়াদা কখন পূর্ণ হবে?

[27:72]

বলুন, অসম্ভব কি, তোমরা যত দ্রুত কামনা করছ তাদের কিয়দংশ তোমাদের পিঠের উপর এসে গেছে

[27:73]

আপনার পালনকর্তা মানুষের প্রতি অনুগ্রহশীল, কিন্তু তাদের অধিকাংশই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না

[27:74]

তাদের অন্তর যা গোপন করে এবং যা প্রকাশ করে আপনার পালনকর্তা অবশ্যই তা জানেন

[27:75]

আকাশে ও পৃথিবীতে এমন কোন গোপন ভেদ নেই, যা সুস্পষ্ট কিতাবে না আছে

[27:76]

এই কোরআন বণী ইসরাঈল যেসব বিষয়ে মতবিরোধ করে, তার অধিকাংশ তাদের কাছে বর্ণনা করে

[27:77]

এবং নিশ্চিতই এটা মুমিনদের জন্যে হেদায়েত ও রহমত

[27:78]

আপনার পালনকর্তা নিজ শাসনক্ষমতা অনুযায়ী তাদের মধ্যে ফয়সালা করে দেবেনতিনি পরাক্রমশালী, সুবিজ্ঞ

[27:79]

অতএব, আপনি আল্লাহর উপর ভরসা করুননিশ্চয় আপনি সত্য ও স্পষ্ট পথে আছেন

[27:80]

আপনি আহবান শোনাতে পারবেন না মৃতদেরকে এবং বধিরকেও নয়, যখন তারা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে চলে যায়

[27:81]

আপনি অন্ধদেরকে তাদের পথভ্রষ্টতা থেকে ফিরিয়ে সৎপথে আনতে পারবেন নাআপনি কেবল তাদেরকে শোনাতে পারবেন, যারা আমার আয়াতসমূহে বিশ্বাস করেঅতএব, তারাই আজ্ঞাবহ

[27:82]

যখন প্রতিশ্রুতি (কেয়ামত) সমাগত হবে, তখন আমি তাদের সামনে ভূগর্ভ থেকে একটি জীব নির্গত করবসে মানুষের সাথে কথা বলবেএ কারণে যে মানুষ আমার নিদর্শনসমূহে বিশ্বাস করত না

[27:83]

যেদিন আমি একত্রিত করব একেকটি দলকে সেসব সম্প্রদায় থেকে, যারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা বলত; অতঃপর তাদেরকে বিভিন্ন দলে বিভক্ত করা হবে

[27:84]

যখন তারা উপস্থিত হয়ে যাবে, তখন আল্লাহ বলবেন, তোমরা কি আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা বলেছিলে? অথচ এগুলো সম্পর্কে তোমাদের পুর্ণ জ্ঞান ছিল নানা তোমরা অন্য কিছু করছিলে?

[27:85]

জুলুমের কারণে তাদের কাছে আযাবের ওয়াদা এসে গেছেএখন তারা কোন কিছু বলতে পারবে না

[27:86]

তারা কি দেখে না যে, আমি রাত্রি সৃষ্টি করেছি তাদের বিশ্রামের জন্যে এবং দিনকে করেছি আলোকময়নিশ্চয় এতে ঈমানদার সম্প্রদায়ের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে

[27:87]

যেদিন সিঙ্গায় ফুৎকার দেওয়া হবে, অতঃপর আল্লাহ যাদেরকে ইচ্ছা করবেন, তারা ব্যতীত নভোমন্ডলে ও ভূমন্ডলে যারা আছে, তারা সবাই ভীতবিহ্বল হয়ে পড়বে এবং সকলেই তাঁর কাছে আসবে বিনীত অবস্থায়

[27:88]

তুমি পর্বতমালাকে দেখে অচল মনে কর, অথচ সেদিন এগুলো মেঘমালার মত চলমান হবেএটা আল্লাহর কারিগরী, যিনি সবকিছুকে করেছেন সুসংহততোমরা যা কিছু করছ, তিনি তা অবগত আছেন

[27:89]

যে কেউ সৎকর্ম নিয়ে আসবে, সে ৎকৃষ্টতর প্রতিদান পাবে এবং সেদিন তারা গুরুতর অস্থিরতা থেকে নিরাপদ থাকবে

[27:90]

এবং যে মন্দ কাজ নিয়ে আসবে, তাকে অগ্নিতে অধঃমূখে নিক্ষেপ করা হবেতোমরা যা করছিলে, তারই প্রতিফল তোমরা পাবে

[27:91]

আমি তো কেবল এই নগরীর প্রভুর এবাদত করতে আদিষ্ট হয়েছি, যিনি একে সম্মানিত করেছেনএবং সব কিছু তাঁরইআমি আরও আদিষ্ট হয়েছি যেন আমি আজ্ঞাবহদের একজন হই

[27:92]

এবং যেন আমি কোরআন পাঠ করে শোনাইপর যে ব্যক্তি সৎপথে চলে, সে নিজের কল্যাণার্থেই সৎপথে চলে এবং কেউ পথভ্রষ্ট হলে আপনি বলে দিন, আমি তো কেবল একজন ভীতি প্রদর্শনকারী

[27:93]

এবং আরও বলুন, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরসত্বরই তিনি তাঁর নিদর্শনসমূহ তোমাদেরকে দেখাবেনতখন তোমরা তা চিনতে পারবেএবং তোমরা যা কর, সে সম্পর্কে আপনার পালনকর্তা গাফেল নন

 

28 Al-Qasas

 শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু

[28:1]

ত্বা-সীন-মীম

[28:2]

এগুলো সুস্পষ্ট কিতাবের আয়াত

[28:3]

আমি আপনার কাছে মূসা ও ফেরাউনের বৃত্তান্ত সত্য সহকারে বর্ণনা করছি ঈমানদার সম্প্রদায়ের জন্যে

[28:4]

ফেরাউন তার দেশে উদ্ধত হয়েছিল এবং সে দেশবাসীকে বিভিন্ন দলে বিভক্ত করে তাদের একটি দলকে দূর্বল করে দিয়েছিল সে তাদের পুত্র-সন্তানদেরকে হত্যা করত এবং নারীদেরকে জীবিত রাখতনিশ্চয় সে ছিল অনর্থ সৃষ্টিকারী

[28:5]

দেশে যাদেরকে দূর্বল করা হয়েছিল, আমার ইচ্ছা হল তাদের প্রতি অনুগ্রহ করার, তাদেরকে নেতা করার এবং তাদেরকে দেশের উত্তরাধিকারী করার

[28:6]

এবং তাদেরকে দেশের ক্ষমতায় আসীন করার এবং ফেরাউন, হামান ও তাদের সৈন্য-বাহিনীকে তা দেখিয়ে দেয়ার, যা তারা সেই দূর্বল দলের তরফ থেকে আশংকা করত

[28:7]

আমি মূসা-জননীকে আদেশ পাঠালাম যে, তাকে স্তন্য দান করতে থাকঅতঃপর যখন তুমি তার সম্পর্কে বিপদের আশংকা কর, তখন তাকে দরিয়ায় নিক্ষেপ কর এবং ভয় করো না, দুঃখও করো নাআমি অবশ্যই তাকে তোমার কাছে ফিরিয়ে দেব এবং তাকে পয়গম্বরগণের একজন করব

[28:8]

অতঃপর ফেরাউন পরিবার মূসাকে কুড়িয়ে নিল, যাতে তিনি তাদের শত্রু ও দুঃখের কারণ হয়ে যাননিশ্চয় ফেরাউন, হামান, ও তাদের সৈন্যবাহিনী অপরাধী ছিল

[28:9]

ফেরাউনের স্ত্রী বলল, এ শিশু আমার ও তোমার নয়নমণি, তাকে হত্যা করো নাএ আমাদের উপকারে আসতে পারে অথবা আমরা তাকে পুত্র করে নিতে পারিপ্রকৃতপক্ষে পরিণাম সম্পর্কে তাদের কোন খবর ছিল না

[28:10]

সকালে মূসা জননীর অন্তর অস্থির হয়ে পড়লযদি আমি তাঁর হৃদয়কে দৃঢ় করে না দিতাম, তবে তিনি মূসাজনিত অস্থিরতা প্রকাশ করেই দিতেনদৃঢ় করলাম, যাতে তিনি থাকেন বিশ্ববাসীগণের মধ্যে

[28:11]

তিনি মূসার ভগিণীকে বললেন, তার পেছন পেছন যাওসে তাদের অজ্ঞাতসারে অপরিচিতা হয়ে তাকে দেখে যেতে লাগল

[28:12]

পূর্ব থেকেই আমি ধাত্রীদেরকে মূসা থেকে বিরত রেখেছিলামমূসার ভগিনী বলল, আমি তোমাদেরকে এমন এক পরিবারের কথা বলব কি, যারা তোমাদের জন্যে একে লালন-পালন করবে এবং তারা হবে তার হিতাকাঙ্ক্ষী?

[28:13]

অতঃপর আমি তাকে জননীর কাছে ফিরিয়ে দিলাম, যাতে তার চক্ষু জুড়ায় এবং তিনি দুঃখ না করেন এবং যাতে তিনি জানেন যে, আল্লাহর ওয়াদা সত্য, কিন্তু অনেক মানুষ তা জানে না

[28:14]

যখন মূসা যৌবনে পদার্পন করলেন এবং পরিণত বয়স্ক হয়ে গেলেন, তখন আমি তাঁকে প্রজ্ঞা ও জ্ঞানদান করলামএমনিভাবে আমি সৎকর্মীদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি

[28:15]

তিনি শহরে প্রবেশ করলেন, যখন তার অধিবাসীরা ছিল বেখবরতথায় তিনি দুই ব্যক্তিকে লড়াইরত দেখলেনএদের একজন ছিল তাঁর নিজ দলের এবং অন্য জন তাঁর শত্রু দলেরঅতঃপর যে তাঁর নিজ দলের সে তাঁর শত্রু দলের লোকটির বিরুদ্ধে তাঁর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করলতখন মূসা তাকে ঘুষি মারলেন এবং এতেই তার মৃত্যু হয়ে গেলমূসা বললেন, এটা শয়তানের কাজ নিশ্চয় সে প্রকাশ্য শত্রু, বিভ্রান্তকারী

[28:16]

তিনি বললেন, হে আমার পালনকর্তা, আমি তো নিজের উপর জুলুম করে ফেলেছিঅতএব, আমাকে ক্ষমা করুনআল্লাহ তাকে ক্ষমা করলেননিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, দয়ালু

[28:17]

তিনি বললেন, হে আমার পালনকর্তা, আপনি আমার প্রতি যে অনুগ্রহ করেছেন, এরপর আমি কখনও অপরাধীদের সাহায্যকারী হব না

[28:18]

অতঃপর তিনি প্রভাতে উঠলেন সে শহরে ভীত-শংকিত অবস্থায়হঠাৎ তিনি দেখলেন, গতকল্য যে ব্যক্তি তাঁর সাহায্য চেয়েছিল, সে চিৎকার করে তাঁর সাহায্য প্রার্থনা করছেমূসা তাকে বললেন, তুমি তো একজন প্রকাশ্য পথভ্রষ্ট ব্যক্তি

[28:19]

অতঃপর মূসা যখন উভয়ের শত্রুকে শায়েস্তা করতে চাইলেন, তখন সে বলল, গতকল্য তুমি যেমন এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছিলে, সে রকম আমাকেও কি হত্যা করতে চাও? তুমি তো পৃথিবীতে স্বৈরাচারী হতে চাচ্ছ এবং সন্ধি স্থাপনকারী হতে চাও না

[28:20]

এসময় শহরের প্রান্ত থেকে একব্যক্তি ছুটে আসল এবং বলল, হে মূসা, রাজ্যের পরিষদবর্গ তোমাকে হত্যা করার পরমর্শ করছেঅতএব, তুমি বের হয়ে যাওআমি তোমার হিতাকাঙ্ক্ষী

[28:21]

অতঃপর তিনি সেখান থেকে ভীত অবস্থায় বের হয়ে পড়লেন পথ দেখতে দেখতেতিনি বললেন, হে আমার পালনকর্তা, আমাকে জালেম সম্প্রদায়ের কবল থেকে রক্ষা কর

[28:22]

যখন তিনি মাদইয়ান অভিমুখে রওয়ানা হলেন তখন বললেন, আশা করা যায় আমার পালনকর্তা আমাকে সরল পথ দেখাবেন

[28:23]

যখন তিনি মাদইয়ানের কূপের ধারে পৌছলেন, তখন কূপের কাছে একদল লোককে পেলেন তারা জন্তুদেরকে পানি পান করানোর কাজে রতএবং তাদের পশ্চাতে দূজন স্ত্রীলোককে দেখলেন তারা তাদের জন্তুদেরকে আগলিয়ে রাখছেতিনি বললেন, তোমাদের কি ব্যাপার? তারা বলল, আমরা আমাদের জন্তুদেরকে পানি পান করাতে পারি না, যে পর্যন্ত রাখালরা তাদের জন্তুদেরকে নিয়ে সরে না যায়আমাদের পিতা খুবই বৃদ্ধ

[28:24]

অতঃপর মূসা তাদের জন্তুদেরকে পানি পান করালেনঅতঃপর তিনি ছায়ার দিকে সরে গেলেন এবং বললেন, হে আমার পালনকর্তা, তুমি আমার প্রতি যে অনুগ্রহ নাযিল করবে, আমি তার মুখাপেক্ষী

[28:25]

অতঃপর বালিকাদ্বয়ের একজন লজ্জাজড়িত পদক্ষেপে তাঁর কাছে আগমন করলবলল, আমার পিতা আপনাকে ডাকছেন, যাতে আপনি যে আমাদেরকে পানি পান করিয়েছেন, তার বিনিময়ে পুরস্কার প্রদান করেনঅতঃপর মূসা যখন তাঁর কাছে গেলেন এবং সমস্ত বৃত্তান্ত বর্ণনা করলেন, তখন তিনি বললেন, ভয় করো না, তুমি জালেম সম্প্রদায়ের কবল থেকে রক্ষা পেয়েছ

[28:26]

বালিকাদ্বয়ের একজন বলল পিতাঃ তাকে চাকর নিযুক্ত করুনকেননা, আপনার চাকর হিসেবে সে-ই উত্তম হবে, যে শক্তিশালী ও বিশ্বস্ত

[28:27]

পিতা মূসাকে বললেন, আমি আমার এই কন্যাদ্বয়ের একজনকে তোমার সাথে বিবাহে দিতে চাই এই শর্তে যে, তুমি আট বছর আমার চাকুরী করবে, যদি তুমি দশ বছর পূর্ণ কর, তা তোমার ইচ্ছাআমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাই নাআল্লাহ চাহেন তো তুমি আমাকে সৎকর্মপরায়ণ পাবে

[28:28]

মূসা বললেন, আমার ও আপনার মধ্যে এই চুক্তি স্থির হলদুটি মেয়াদের মধ্য থেকে যে কোন একটি পূর্ণ করলে আমার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ থাকবে নাআমরা যা বলছি, তাতে আল্লাহর উপর ভরসা

[28:29]

অতঃপর মূসা (আঃ) যখন সেই মেয়াদ পূর্ণ করল এবং সপরিবারে যাত্রা করল, তখন সে তুর পর্বতের দিক থেকে আগুন দেখতে পেলসে তার পরিবারবর্গকে বলল, তোমরা অপেক্ষা কর, আমি আগুন দেখেছি সম্ভবতঃ আমি সেখান থেকে তোমাদের কাছে কোন খবর নিয়ে আসতে পারি অথবা কোন জ্বলন্ত কাষ্ঠখন্ড আনতে পারি, যাতে তোমরা আগুন পোহাতে পার

[28:30]

যখন সে তার কাছে পৌছল, তখন পবিত্র ভূমিতে অবস্থিত উপত্যকার ডান প্রান্তের বৃক্ষ থেকে তাকে আওয়াজ দেয়া হল, হে মূসা! আমি আল্লাহ, বিশ্ব পালনকর্তা

[28:31]

আরও বলা হল, তুমি তোমার লাঠি নিক্ষেপ করঅতঃপর যখন সে লাঠিকে সর্পের ন্যায় দৌড়াদৌড়ি করতে দেখল, তখন সে মুখ ফিরিয়ে বিপরীত দিকে পালাতে লাগল এবং পেছন ফিরে দেখল নাহে মূসা, সামনে এস এবং ভয় করো নাতোমার কোন আশংকা নেই

[28:32]

তোমার হাত বগলে রাখতা বের হয়ে আসবে নিরাময় উজ্জ্বল হয়ে এবং ভয় হেতু তোমার হাত তোমার উপর চেপে ধরএই দুটি ফেরাউন ও তার পরিষদবর্গের প্রতি তোমার পালনকর্তার তরফ থেকে প্রমাণ নিশ্চয় তারা পাপাচারী সম্প্রদায়

[28:33]

মূসা বলল, হে আমার পালনকর্তা, আমি তাদের এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছিকাজেই আমি ভয় করছি যে, তারা আমাকে হত্যা করবে

[28:34]

আমার ভাই হারুণ, সে আমা অপেক্ষা প্রাঞ্জলভাষীঅতএব, তাকে আমার সাথে সাহায্যের জন্যে প্রেরণ করুনসে আমাকে সমর্থন জানাবেআমি আশংকা করি যে, তারা আমাকে মিথ্যাবাদী বলবে

[28:35]

আল্লাহ বললেন, আমি তোমার বাহু শক্তিশালী করব তোমার ভাই দ্বারা এবং তোমাদের প্রধান্য দান করবফলে, তারা তোমার কাছে পৌছাতে পারবে নাআমার নিদর্শনাবলীর জোরে তোমরা এবং তোমাদের অনুসারীরা প্রবল থাকবে

[28:36]

অতঃপর মূসা যখন তাদের কাছে আমার সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী নিয়ে পৌছল, তখন তারা বলল, এতো অলীক জাদু মাত্রআমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের মধ্যে এ কথা শুনিনি

[28:37]

মূসা বলল, আমার পালনকর্তা সম্যক জানেন যে তার নিকট থেকে হেদায়েতের কথা নিয়ে আগমন করেছে এবং যে প্রাপ্ত হবে পরকালের গৃহনিশ্চয় জালেমরা সফলকাম হবে না

[28:38]

ফেরাউন বলল, হে পরিষদবর্গ, আমি জানি না যে, আমি ব্যতীত তোমাদের কোন উপাস্য আছেহে হামান, তুমি ইট পোড়াও, অতঃপর আমার জন্যে একটি প্রাসাদ নির্মাণ কর, যাতে আমি মূসার উপাস্যকে উকি মেরে দেখতে পারিআমার তো ধারণা এই যে, সে একজন মিথ্যাবাদী

[28:39]

ফেরাউন ও তার বাহিনী অন্যায়ভাবে পৃথিবীতে অহংকার করতে লাগল এবং তারা মনে করল যে, তারা আমার কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে না

[28:40]

অতঃপর আমি তাকে ও তার বাহিনীকে পাকড়াও করলাম, ৎপর আমি তাদেরকে সমু?েদ্র নিক্ষেপ করলামঅতএব, দেখ জালেমদের পরিণাম কি হয়েছে

[28:41]

আমি তাদেরকে নেতা করেছিলাম তারা জাহান্নামের দিকে আহবান করতকেয়ামতের দিন তারা সাহায্য প্রাপ্ত হবে না

[28:42]

আমি এই পৃথিবীতে অভিশাপকে তাদের পশ্চাতে লাগিয়ে দিয়েছি এবং কেয়ামতের দিন তারা হবে দুর্দশাগ্রস্ত

[28:43]

আমি পূর্ববর্তী অনেক সম্প্রদায়কে ধ্বংস করার পর মূসাকে কিতাব দিয়েছি মানুষের জন্যে জ্ঞানবর্তিকা হেদায়েত ও রহমত, যাতে তারা স্মরণ রাখে

[28:44]

মূসাকে যখন আমি নির্দেশনামা দিয়েছিলাম, তখন আপনি পশ্চিম প্রান্তে ছিলেন না এবং আপনি প্রত্যক্ষদর্শীও ছিলেন না

[28:45]

কিন্তু আমি অনেক সম্প্রদায় সৃষ্টি করেছিলাম, অতঃপর তাদের অনেক যুগ অতিবাহিত হয়েছেআর আপনি মাদইয়ানবাসীদের মধ্যে ছিলেন না যে, তাদের কাছে আমার আয়াতসমূহ পাঠ করতেন কিন্তু আমিই ছিলাম রসূল প্রেরণকারী

[28:46]

আমি যখন মূসাকে আওয়াজ দিয়েছিলাম, তখন আপনি তুর পর্বতের পার্শ্বে ছিলেন নাকিন্তু এটা আপনার পালনকর্তার রহমত স্বরূপ, যাতে আপনি এমন এক সম্প্রদায়কে ভীতি প্রদর্শন করেন, যাদের কাছে আপনার পূêেব কোন ভীতি প্রদর্শনকারী আগমন করেনি, যাতে তারা স্মরণ রাখে

[28:47]

আর এ জন্য যে, তাদের কৃতকর্মের জন্যে তাদের কোন বিপদ হলে তারা বলত, হে আমাদের পালনকর্তা, তুমি আমাদের কাছে কোন রসূল প্রেরণ করলে না কেন? করলে আমরা তোমার আয়াতসমূহের অনুসরণ করতাম এবং আমরা বিশ্বাস স্থাপনকারী হয়ে যেতাম

[28:48]

অতঃপর আমার কাছ থেকে যখন তাদের কাছে সত্য আগমন করল, তখন তারা বলল, মূসাকে যেরূপ দেয়া হয়েছিল, এই রসূলকে সেরূপ দেয়া হল না কেন? পূর্বে মূসাকে যা দেয়া হয়েছিল, তারা কি তা অস্বীকার করেনি? তারা বলেছিল, উভয়ই জাদু, পরস্পরে একাত্মতারা আরও বলেছিল, আমরা উভয়কে মানি না

[28:49]

বলুন, তোমরা সত্যবাদী হলে এখন আল্লাহর কাছ থেকে কোন কিতাব আন, যা এতদুভয় থেকে উত্তম পথপ্রদর্শক হয়আমি সেই কিতাব অনুসরণ করব

[28:50]

অতঃপর তারা যদি আপনার কথায় সাড়া না দেয়, তবে জানবেন, তারা শুধু নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করেআল্লাহর হেদায়েতের পরিবর্তে যে ব্যক্তি নিজ প্রবৃত্তির অনুসরণ করে, তার চাইতে অধিক পথভ্রষ্ট আর কে? নিশ্চয় আল্লাহ জালেম সম্প্রদায়কে পথ দেখান না

[28:51]

আমি তাদের কাছে উপর্যুপরি বাণী পৌছিয়েছিযাতে তারা অনুধাবন করে

[28:52]

কোরআনের পূর্বে আমি যাদেরকে কিতাব দিয়েছি, তারা এতে বিশ্বাস করে

[28:53]

যখন তাদের কাছে এটা পাঠ করা হয়, তখন তারা বলে, আমরা এর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করলামএটা আমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে সত্যআমরা এর পূর্বেও আজ্ঞাবহ ছিলাম

[28:54]

তারা দুইবার পুরস্কৃত হবে তাদের সবরের কারণেতারা মন্দের জওয়াবে ভাল করে এবং আমি তাদেরকে যা দিয়েছি, তা থেকে ব্যয় করে

[28:55]

তারা যখন অবাঞ্চিত বাজে কথাবার্তা শ্রবণ করে, তখন তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং বলে, আমাদের জন্যে আমাদের কাজ এবং তোমাদের জন্যে তোমাদের কাজতোমাদের প্রতি সালামআমরা অজ্ঞদের সাথে জড়িত হতে চাই না

[28:56]

আপনি যাকে পছন্দ করেন, তাকে ৎপথে আনতে পারবেন না, তবে আল্লাহ তাআলাই যাকে ইচ্ছা সৎপথে আনয়ন করেনকে ৎপথে আসবে, সে সম্পর্কে তিনিই ভাল জানেন

[28:57]

তারা বলে, যদি আমরা আপনার সাথে সুপথে আসি, তবে আমরা আমাদের দেশ থেকে উৎখাত হবআমি কি তাদের জন্যে একটি নিরাপদ হরম প্রতিষ্ঠিত করিনি? এখানে সর্বপ্রকার ফল-মূল আমদানী হয় আমার দেয়া রিযিকস্বরূপকিন্তু তাদের অধিকাংশই জানে না

[28:58]

আমি অনেক জনপদ ধবংস করেছি, যার অধিবাসীরা তাদের জীবন যাপনে মদমত্ত ছিলএগুলোই এখন তাদের ঘর-বাড়ীতাদের পর এগুলোতে মানুষ সামান্যই বসবাস করেছেঅবশেষে আমিই মালিক রয়েছি

[28:59]

আপনার পালনকর্তা জনপদসমূহকে ধ্বংস করেন না, যে পর্যন্ত তার কেন্দ্রস্থলে রসূল প্রেরণ না করেন, যিনি তাদের কাছে আমার আয়াতসমূহ পাঠ করেন এবং আমি জনপদসমূহকে তখনই ধ্বংস করি, যখন তার বাসিন্দারা জুলুম করে

[28:60]

তোমাদেরকে যা কিছু দেয়া হয়েছে, তা পার্থিব জীবনের ভোগ ও শোভা বৈ নয়আর আল্লাহর কাছে যা আছে, তা উত্তম ও স্থায়ীতোমরা কি বোঝ না ?

[28:61]

যাকে আমি উত্তম প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, যা সে পাবে, সে কি ঐ ব্যক্তির সমান, যাকে আমি পার্থিব জীবনের ভোগ-সম্ভার দিয়েছি, অতঃপর তাকে কেয়ামতের দিন অপরাধীরূপে হাযির করা হবে?

[28:62]

যেদিন আল্লাহ তাদেরকে আওয়াজ দিয়ে বলবেন, তোমরা যাদেরকে আমার শরীক দাবী করতে, তারা কোথায়?

[28:63]

যাদের জন্যে শাস্তির আদেশ অবধারিত হয়েছে, তারা বলবে, হে আমাদের পালনকর্তাএদেরকেই আমরা পথভ্রষ্ট করেছিলামআমরা তাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিলাম, যেমন আমরা পথভ্রষ্ট হয়েছিলামআমরা আপনার সামনে দায়মুক্ত হচ্ছিতারা কেবল আমাদেরই এবাদত করত না

[28:64]

বলা হবে, তোমরা তোমাদের শরীকদের আহবান করতখন তারা ডাকবে,অতঃপর তারা তাদের ডাকে সাড়া দিবে না এবং তারা আযাব দেখবেহায়! তারা যদি সৎপথ প্রাপ্ত হত

[28:65]

যে দিন আল্লাহ তাদেরকে ডেকে বলবেন, তোমরা রসূলগণকে কি জওয়াব দিয়েছিলে?

[28:66]

অতঃপর তাদের কথাবার্তা বন্ধ হয়ে যাবে এবং তারা একে অপরকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে না

[28:67]

তবে যে তওবা করে, বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে, আশা করা যায়, সে সফলকাম হবে

[28:68]

আপনার পালনকর্তা যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন এবং পছন্দ করেনতাদের কোন ক্ষমতা নেইআল্লাহ পবিত্র এবং তারা যাকে শরীক করে, তা থেকে উর্ধ্বে

[28:69]

তাদের অন্তর যা গোপন করে এবং যা প্রকাশ করে, আপনার পালনকর্তা তা জানেন

[28:70]

তিনিই আল্লাহ তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেইইহকাল ও পরকালে তাঁরই প্রশংসাবিধান তাঁরই ক্ষমতাধীন এবং তোমরা তাঁরই কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে

[28:71]

বলুন, ভেবে দেখ তো, আল্লাহ যদি রাত্রিকে কেয়ামতের দিন পর্যন্ত স্থায়ী করেন, তবে আল্লাহ ব্যতীত এমন উপাস্য কে আছে, যে তোমাদেরকে আলোক দান করতে পারে? তোমরা কি তবুও কর্ণêপাত করবে না?

[28:72]

বলুন, ভেবে দেখ তো, আল্লাহ যদি দিনকে কেয়ামতের দিন পর্যন্ত স্থায়ী করেন, তবে আল্লাহ ব্যতীত এমন উপাস্য কে আছে যে, তোমাদেরকে রাত্রি দান করতে পারে, যাতে তোমরা বিশ্রাম করবে ? তোমরা কি তবুও ভেবে দেখবে না ?

[28:73]

তিনিই স্বীয় রহমতে তোমাদের জন্যে রাত ও দিন করেছেন, যাতে তোমরা তাতে বিশ্রাম গ্রহণ কর ও তাঁর অনুগ্রহ অন্বেষণ কর এবং যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর

[28:74]

যেদিন আল্লাহ তাদেরকে ডেকে বলবেন, তোমরা যাদেরকে আমার শরীক মনে করতে, তারা কোথায়?

[28:75]

প্রত্যেক সম্প্রদায় থেকে আমি একজন সাক্ষী আলাদা করব; অতঃপর বলব, তোমাদের প্রমাণ আনতখন তারা জানতে পারবে যে, সত্য আল্লাহর এবং তারা যা গড়ত, তা তাদের কাছ থেকে উধাও হয়ে যাবে

[28:76]

কারুন ছিল মূসার সম্প্রদায়ভুক্তঅতঃপর সে তাদের প্রতি দুষ্টামি করতে আরম্ভ করলআমি তাকে এত ধন-ভান্ডার দান করেছিলাম যার চাবি বহন করা কয়েকজন শক্তিশালী লোকের পক্ষে কষ্টসাধ্য ছিলযখন তার সম্প্রদায় তাকে বলল, দম্ভ করো না, আল্লাহ দাম্ভিকদেরকে ভালবাসেন না

[28:77]

আল্লাহ তোমাকে যা দান করেছেন, তদ্বারা পরকালের গৃহ অনুসন্ধান কর, এবং ইহকাল থেকে তোমার অংশ ভূলে যেয়ো না তুমি অনুগ্রহ কর, যেমন আল্লাহ তোমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন এবং পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করতে প্রয়াসী হয়ো নানিশ্চয় আল্লাহ অনর্থ সৃষ্টিকারীদেরকে পছন্দ করেন না

[28:78]

সে বলল, আমি এই ধন আমার নিজস্ব জ্ঞান-গরিমা দ্বারা প্রাপ্ত হয়েছিসে কি জানে না যে, আল্লাহ তার পূর্বে অনেক সম্প্রদায়কে ধ্বংস করেছেন, যারা শক্তিতে ছিল তার চাইতে প্রবল এবং ধন-সম্পদে অধিক প্রাচুর্যশীল? পাপীদেরকে তাদের পাপকর্ম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে না

[28:79]

অতঃপর কারুন জাঁকজমক সহকারে তার সম্প্রদায়ের সামনে বের হলযারা পার্থিব জীবন কামনা করত, তারা বলল, হায়, কারুন যা প্রাপ্ত হয়েছে, আমাদেরকে যদি তা দেয়া হত! নিশ্চয় সে বড় ভাগ্যবান

[28:80]

আর যারা জ্ঞান প্রাপ্ত হয়েছিল, তার বলল, ধিক তোমাদেরকে, যারা ঈমানদার এবং সৎকর্মী, তাদের জন্যে আল্লাহর দেয়া সওয়াবই উৎকৃষ্টএটা তারাই পায়, যারা সবরকারী

[28:81]

অতঃপর আমি কারুনকে ও তার প্রাসাদকে ভূগর্ভে বিলীন করে দিলামতার পক্ষে আল্লাহ ব্যতীত এমন কোন দল ছিল না, যারা তাকে সাহায্য করতে পারে এবং সে নিজেও আত্মরক্ষা করতে পারল না

[28:82]

গতকল্য যারা তার মত হওয়ার বাসনা প্রকাশ করেছিল, তারা প্রত্যুষে বলতে লাগল, হায়, আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার জন্যে ইচ্ছা রিযিক বর্ধিত করেন ও হ্রাস করেনআল্লাহ আমাদের প্রতি অনুগ্রহ না করলে আমাদেরকেও ভূগর্ভে বিলীন করে দিতেনহায়, কাফেররা সফলকাম হবে না

[28:83]

এই পরকাল আমি তাদের জন্যে নির্ধারিত করি, যারা দুনিয়ার বুকে ঔদ্ধত্য প্রকাশ করতে ও অনর্থ সৃষ্টি করতে চায় নাখোদাভীরুদের জন্যে শুভ পরিণাম

[28:84]

যে সৎকর্ম নিয়ে আসবে, সে তদপেক্ষা উত্তম ফল পাবে এবং যে মন্দ কর্ম নিয়ে আসবে, এরূপ মন্দ কর্মীরা সে মন্দ কর্ম পরিমানেই প্রতিফল পাবে

[28:85]

যিনি আপনার প্রতি কোরআনের বিধান পাঠিয়েছেন, তিনি অবশ্যই আপনাকে স্বদেশে ফিরিয়ে আনবেনবলুন আমার পালনকর্তা ভাল জানেন কে হেদায়েত নিয়ে এসেছে এবং কে প্রকাশ্য বিভ্রান্তিতে আছে

[28:86]

আপনি আশা করতেন না যে, আপনার প্রতি কিতাব অবর্তীর্ণ হবেএটা কেবল আপনার পালনকর্তার রহমতঅতএব আপনি কাফেরদের সাহায্যকারী হবেন না

[28:87]

কাফেররা যেন আপনাকে আল্লাহর আয়াত থেকে বিমুখ না করে সেগুলো আপনার প্রতি অবর্তীর্ণ হওয়ার পর আপনি আপনার পালনকর্তার প্রতি দাওয়াত দিন এবং কিছুতেই মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হবেন না

[28:88]

আপনি আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্যকে আহবান করবেন নাতিনি ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নেইআল্লাহর সত্তা ব্যতীত সবকিছু ধবংস হবেবিধান তাঁরই এবং তোমরা তাঁরই কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে

 

29 Al-‘Ankabût

 শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু

[29:1]

আলিফ-লাম-মীম

[29:2]

মানুষ কি মনে করে যে, তারা একথা বলেই অব্যাহতি পেয়ে যাবে যে, আমরা বিশ্বাস করি এবং তাদেরকে পরীক্ষা করা হবে না?

[29:3]

আমি তাদেরকেও পরীক্ষা করেছি, যারা তাদের পূর্বে ছিলআল্লাহ অবশ্যই জেনে নেবেন যারা সত্যবাদী এবং নিশ্চয়ই জেনে নেবেন মিথ্যুকদেরকে

[29:4]

যারা মন্দ কাজ করে, তারা কি মনে করে যে, তারা আমার হাত থেকে বেঁচে যাবে? তাদের ফয়সালা খুবই মন্দ

[29:5]

যে আল্লাহর সাক্ষাত কামনা করে, আল্লাহর সেই নির্ধারিত কাল অবশ্যই আসবেতিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী

[29:6]

যে কষ্ট স্বীকার করে, সে তো নিজের জন্যেই কষ্ট স্বীকার করেআল্লাহ বিশ্ববাসী থেকে বে-পরওয়া

[29:7]

আর যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও ৎকর্ম করে, আমি অবশ্যই তাদের মন্দ কাজ গুলো মিটিয়ে দেব এবং তাদেরকে কর্মের ৎকৃষ্টতর প্রতিদান দেব

[29:8]

আমি মানুষকে পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করার জোর নির্দেশ দিয়েছিযদি তারা তোমাকে আমার সাথে এমন কিছু শরীক করার জোর প্রচেষ্টা চালায়, যার সম্পর্কে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তবে তাদের আনুগত্য করো নাআমারই দিকে তোমাদের প্রত্যাবর্তনঅতঃপর আমি তোমাদেরকে বলে দেব যা কিছু তোমরা করতে

[29:9]

যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও ৎকাজ করে, আমি অবশ্যই তাদেরকে সৎকর্মীদের অন্তর্ভুক্ত করব

[29:10]

কতক লোক বলে, আমরা আল্লাহর উপর বিশ্বাস স্থাপন করেছি; কিন্তু আল্লাহর পথে যখন তারা নির্যাতিত হয়, তখন তারা মানুষের নির্যাতনকে আল্লাহর আযাবের মত মনে করেযখন আপনার পালনকর্তার কাছ থেকে কোন সাহায্য আসে তখন তারা বলতে থাকে, আমরা তো তোমাদের সাথেই ছিলামবিশ্ববাসীর অন্তরে যা আছে, আল্লাহ কি তা সম্যক অবগত নন?

[29:11]

আল্লাহ অবশ্যই জেনে নেবেন যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে এবং নিশ্চয় জেনে নেবেন যারা মুনাফেক

[29:12]

কাফেররা মুমিনদেরকে বলে, আমাদের পথ অনুসরণ করআমরা তোমাদের পাপভার বহন করবঅথচ তারা পাপভার কিছুতেই বহন করবে নানিশ্চয় তারা মিথ্যাবাদী

[29:13]

তারা নিজেদের পাপভার এবং তার সাথে আরও কিছু পাপভার বহন করবেঅবশ্য তারা যে সব মিথ্যা কথা উদ্ভাবন করে, সে সম্পর্কে কেয়ামতের দিন জিজ্ঞাসিত হবে

[29:14]

আমি নূহ (আঃ) কে তাঁর সম্প্রদায়ের কাছে প্রেরণ করেছিলামতিনি তাদের মধ্যে পঞ্চাশ কম এক হাজার বছর অবস্থান করেছিলেনঅতঃপর তাদেরকে মহাপ্লাবণ গ্রাস করেছিলতারা ছিল পাপী

[29:15]

অতঃপর আমি তাঁকে ও নৌকারোহীগণকে রক্ষা করলাম এবং নৌকাকে নিদর্শন করলাম বিশ্ববাসীর জন্যে

[29:16]

স্মরণ কর ইব্রাহীমকেযখন তিনি তাঁর সম্প্রদায়কে বললেন; তোমরা আল্লাহর এবাদত কর এবং তাঁকে ভয় করএটাই তোমাদের জন্যে উত্তম যদি তোমরা বোঝ

[29:17]

তোমরা তো আল্লাহর পরিবর্তে কেবল প্রতিমারই পূজা করছ এবং মিথ্যা উদ্ভাবন করছতোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের এবাদত করছ, তারা তোমাদের রিযিকের মালিক নয়কাজেই আল্লাহর কাছে রিযিক তালাশ কর, তাঁর এবাদত কর এবং তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতাঁরই কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে

[29:18]

তোমরা যদি মিথ্যাবাদী বল, তবে তোমাদের পূর্ববর্তীরাও তো মিথ্যাবাদী বলেছেস্পষ্টভাবে পয়গাম পৌছে দেয়াই তো রসূলের দায়িত্ব

[29:19]

তারা কি দেখে না যে, আল্লাহ কিভাবে সৃষ্টিকর্ম শুরু করেন অতঃপর তাকে পুনরায় সৃষ্টি করবেন? এটা আল্লাহর জন্যে সহজ

[29:20]

বলুন, তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ কর এবং দেখ, কিভাবে তিনি সৃষ্টিকর্ম শুরু করেছেনঅতঃপর আল্লাহ পুর্নবার সৃষ্টি করবেননিশ্চয় আল্লাহ সবকিছু করতে সক্ষম

[29:21]

তিনি যাকে ইচ্ছা শাস্তি দেন এবং যার প্রতি ইচ্ছা রহমত করেনতাঁরই দিকে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে

[29:22]

তোমরা স্থলে ও অন্তরীক্ষে আল্লাহকে অপারগ করতে পারবে না এবং আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের কোন হিতাকাঙ্খী নেই, সাহায্যকারীও নেই

[29:23]

যারা আল্লাহর আয়াত সমূহ ও তাঁর সাক্ষাত অস্বীকার করে, তারাই আমার রহমত থেকে নিরাশ হবে এবং তাদের জন্যেই যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে

[29:24]

তখন ইব্রাহীমের সম্প্রদায়ের এছাড়া কোন জওয়াব ছিল না যে তারা বলল, তাকে হত্যা কর অথবা অগ্নিদগ্ধ করঅতঃপর আল্লাহ তাকে অগ্নি থেকে রক্ষা করলেননিশ্চয় এতে বিশ্বাসী লোকদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে

[29:25]

ইব্রাহীম বললেন, পার্থিব জীবনে তোমাদের পারস্পরিক ভালবাসা রক্ষার জন্যে তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে প্রতিমাগুলোকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করেছএরপর কেয়ামতের দিন তোমরা একে অপরকে অস্বীকার করবে এবং একে অপরকে লানত করবেতোমাদের ঠিকানা জাহান্নাম এবং তোমাদের কোন সাহায্যকারী নেই

[29:26]

অতঃপর তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করলেন লূতইব্রাহীম বললেন, আমি আমার পালনকর্তার উদ্দেশে দেশত্যাগ করছি নিশ্চয় তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়

[29:27]

আমি তাকে দান করলাম ইসহাক ও ইয়াকুব, তাঁর বংশধরদের মধ্যে নবুওয়ত ও কিতাব রাখলাম এবং দুনিয়াতে তাঁকে পুরস্কৃত করলামনিশ্চয় পরকালে ও সে সৎলোকদর অন্তর্ভূক্ত হবে

[29:28]

আর প্রেরণ করেছি লূতকেযখন সে তার সম্প্রদায়কে বলল, তোমরা এমন অশ্লীল কাজ করছ, যা তোমাদের পূর্বে পৃথিবীর কেউ করেনি

[29:29]

তোমরা কি পুংমৈথুনে লিপ্ত আছ, রাহাজানি করছ এবং নিজেদের মজলিসে গর্হিত কর্ম করছ? জওয়াবে তাঁর সম্প্রদায় কেবল একথা বলল, আমাদের উপর আল্লাহর আযাব আন যদি তুমি সত্যবাদী হও

[29:30]

সে বলল, হে আমার পালনকর্তা, দুস্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে আমাকে সাহায্য কর

[29:31]

যখন আমার প্রেরিত ফেরেশতাগণ সুসংবাদ নিয়ে ইব্রাহীমের কাছে আগমন করল, তখন তারা বলল, আমরা এই জনপদের অধিবাসীদেরকে ধ্বংস করবনিশ্চয় এর অধিবাসীরা জালেম

[29:32]

সে বলল, এই জনপদে তো লূতও রয়েছেতারা বলল, সেখানে কে আছে, তা আমরা ভাল জানিআমরা অবশ্যই তাকে ও তাঁর পরিবারবর্গকে রক্ষা করব তাঁর স্ত্রী ব্যতীত; সে ধ্বংসপ্রাপ্তদের অন্তর্ভূক্ত থাকবে

[29:33]

যখন আমার প্রেরিত ফেরেশতাগণ লূতের কাছে আগমন করল, তখন তাদের কারণে সে বিষন্ন হয়ে পড়ল এবং তার মন সংকীর্ণ হয়ে গেলতারা বলল, ভয় করবেন না এবং দুঃখ করবেন নাআমরা আপনাকে ও আপনার পরিবারবর্গকে রক্ষা করবই আপনার স্ত্রী ব্যতীত, সে ধ্বংস প্রাপ্তদের অন্তর্ভূক্ত থাকবে

[29:34]

আমরা এই জনপদের অধিবাসীদের উপর আকাশ থেকে আযাব নাজিল করব তাদের পাপাচারের কারণে

[29:35]

আমি বুদ্ধিমান লোকদের জন্যে এতে একটি স্পষ্ট নিদর্শন রেখে দিয়েছি

[29:36]

আমি মাদইয়ানবাসীদের প্রতি তাদের ভাই শোআয়বকে প্রেরণ করেছিসে বলল, হে আমার সম্প্রদায় তোমরা আল্লাহর এবাদত কর, শেষ দিবসের আশা রাখ এবং পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করো না

[29:37]

কিন্তু তারা তাঁকে মিথ্যাবাদী বলল; অতঃপর তারা ভূমিকম্প দ্বারা আক্রান্ত হল এবং নিজেদের গৃহে উপুড় হয়ে পড়ে রইল

[29:38]

আমি আদ ও সামুদকে ধ্বংস করে দিয়েছিতাদের বাড়ী-ঘর থেকেই তাদের অবস্থা তোমাদের জানা হয়ে গেছেশয়তান তাদের কর্মকে তাদের দৃষ্টিতে সুশোভিত করেছিল, অতঃপর তাদেরকে সৎপথ অবলম্বনে বাধা দিয়েছিল এবং তারা ছিল হুশিয়ার

[29:39]

আমি কারুন, ফেরাউন ও হামানকে ধ্বংস করেছিমূসা তাদের কাছে সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী নিয়ে আগমন করেছিল অতঃপর তারা দেশে দম্ভ করেছিলকিন্তু তারা জিতে যায়নি

[29:40]

আমি প্রত্যেককেই তার অপরাধের কারণে পাকড়াও করেছিতাদের কারও প্রতি প্রেরণ করেছি প্রস্তরসহ প্রচন্ড বাতাস, কাউকে পেয়েছে বজ্রপাত, কাউকে আমি বিলীন করেছি ভূগর্ভে এবং কাউকে করেছি নিমজ্জত আল্লাহ তাদের প্রতি যুলুম করার ছিলেন না; কিন্তু তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতি যুলুম করেছে

[29:41]

যারা আল্লাহর পরিবর্তে অপরকে সাহায্যকারীরূপে গ্রহণ করে তাদের উদাহরণ মাকড়সাসে ঘর বানায়আর সব ঘরের মধ্যে মাকড়সার ঘরই তো অধিক দুর্বল, যদি তারা জানত

[29:42]

তারা আল্লাহর পরিবর্তে যা কিছুকে ডাকে, আল্লাহ তা জানেনতিনি শক্তিশালী, প্রজ্ঞাময়

[29:43]

এ সকল উদাহরণ আমি মানুষের জন্যে দেই; কিন্তু জ্ঞানীরাই তা বোঝে

[29:44]

আল্লাহ যথার্থরূপে নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল সৃষ্টি করেছেনএতে নিদর্শন রয়েছে ঈমানদার সম্প্রদায়ের জন্যে

[29:45]

আপনি আপনার প্রতি প্রত্যাদিষ্ট কিতাব পাঠ করুন এবং নামায কায়েম করুননিশ্চয় নামায অশ্লীল ও গর্হিত কার্য থেকে বিরত রাখেআল্লাহর স্মরণ সর্বশ্রেষ্ঠআল্লাহ জানেন তোমরা যা কর